---মিরাকল মিশন :ফরেস্ট মিসট্রি ---


--লেখকঃ Khalid Hasan --

--------পঞ্চম পর্ব --------

.

পরের দিন সকালে আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হতে লাগলাম। জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। আসাদকে সঙ্গে নিবো ভেবেছিলাম। কিন্তু বাকি দুই আপদের জন্য আসাদকে আর কিছু খুলে বললাম না। আসাদকে বললাম...
--আসাদ আমি এখানকার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। ফিরতে দেরী হতে পারে। আজকে নাও ফিরতে পারি। তোরা ঘুরাঘুরি কর। থাকার জায়গা নিয়ে তো আর কোনো ঝামেলা নেই।
--এই শহরে তোর পরিচিত কেউ আছে আগে বলিসনি তো?
--প্রয়োজন হয়নি তাই বলিনি।
পাশের রুম থেকে রিমি বেরিয়ে এলো ..
--কি ব্যাপার খালিদ কোথায় যাচ্ছিস একা একা?
--তোর জানতে হবে না। তুই আসাদ আর রাহাতের সাথে ঘুরতে যাস। আমি একটা কাজে যাচ্ছি। ফিরতে লেট হলে টেনশন করিস না।
কেউ আর কিছু বললো না। তবে আসাদ কি যেনো ভাবতে লাগলো। আমি আর কারো দিকে মনোযোগ না দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
.
যাওয়ার আগে শরিফ আঙ্কেলের কাছ থেকে জঙ্গলটার পূর্নাঙ্গ অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিলাম। যাতে ভুল যায়গায় না যাই। শারিফ আঙ্কেল ঠাট্টা করে বললেন ..
--শেষ পর্যন্ত ইয়াং বয়সেই পৃথিবী ছাড়ার ইচ্ছা হলো ইয়াঙ্গম্যান?
আমি উনাকে কিছুই বললাম না। শুধু একটা রহস্যের হাসি দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেখান থেকে।
.
জঙ্গলটা কয়েক কিলোমিটার দূরে। এখান থেকে যেতে বেশ সময় লাগবে মনে হচ্ছে। আমি একটা বাস ধরে যাত্রা শুরু করলাম। বাসে ভীড় খুব। পর্যটক দের ভীড়। দাড়িয়ে দাড়িয়ে যেতে হলো। কিন্তু আমি যে যায়গায় যাবো বাস সেখানে যাবে না। তাই আমাকে বাস থেকে নেমে অন্য পথে যেতে হলো।
.
বেশ কিছুদুর গিয়ে যা চোখে পড়লো এই যায়গায় জনবসতি খুবই কম। পর্বতের গাত্র ঘেষে কিছু উপজাতির বাড়িঘর চোখে পড়লো। উপজাতি সম্মন্ধে আমার ধারণা নেই। তাই বাড়িগুলো দেখে বুঝলাম না এরা কোন বংশোদ্ভূত জাতি।
.
সেখানে যেতেই এক উপজাতি লোক আমার কাছে এলো। আমি লোকটার দিকে তাকালাম। মাঝ বয়সী একটা লোক। আমার কাছে এসেই জিজ্ঞেস করলেন ...
--আপনি ঘুরতে এসেছেন বুঝি?
যাক উপজাতিরা অন্তত বাংলা বলতে পারে।
--হ্যাঁ। অনেকটা সেরকমই।
--আজকাল বাবু এই এলাকায় কেউ ঘুরতে আসে না। এলাকাটায় অভিশাপ লাগছে।
--কেনো কি হয়েছে এই এলাকায়?
--আগে বাবু আমার বাড়িতে চলেন। অনেক দূরের পথ এসেছেন। হাতমুখ ধুইয়ে আগে বিশ্রাম নিবেন চলেন।
লোকটা আমার কাঁধের ব্যাগটা তার কাছে নিয়ে আমাকে তার পিছন পিছন ডাকলো।
.
আমি লোকটার পিছন পিছন যেতে লাগলাম। সম্ভবত পর্যটন এলাকার উপজাতিরা এরকমই। পর্যটকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্তা করে খুব অল্প টাকায়।লোকটা তার বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে সবকিছুর ব্যবস্তা করে দিলো। বাড়িতে সে আর তার স্ত্রী ছাড়া আর কাউকেই দেখলাম না। দুপুর হয়ে গেলে তারা আমার খাওয়ার ব্যবস্থাও করলো।খেতে দিলো কাকড়া ভাজা। নির্দিধায় খেয়ে নিলাম । লোকটা অনেক অথিতি পরায়ন কর্মকান্ড দেখে বুঝলাম। লোকটার নাম জানতে পারলাম "আম্রাথু"। উচ্চারণ করতেই দাত ভেংগে যাবে মনে হচ্ছে। উপজাতিদের আজব সব নাম।
.
এরপর লোকটা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো প্রকৃতি টা ঘুরিয়ে দেখাবে বলে। ঘুরতে ঘুরতে তার সাথে কথা বলতে লাগলাম ..
--তোমার পূর্বপুরুষ রাও কি এখানেই থাকতো?
--হ বাবু। আমি ছোট থেকেই এইখানে বড় হইছি।
--আমি শুনেছি এখানে একটা জঙ্গল আছে যার কিছু রহস্যের কারণে পুরো যায়গাটাই এখন অভিশপ্ত।
--হ বাবু ঠিকই শুনিছেন। সেইজন্য এই জায়গায় এখন আর আগের মতো পর্যটকদের ভীড় নাই। আগে প্রচুর ভীড় হইতো। কিন্তু এখন লোকমুখে জঙ্গলের কান্ডকীর্তি শুনা যায়। তাই মানুষও ঝুকি নিয়ে এখানে আসে না।
--আমি শুনেছি সবাই জায়গাটা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তোমরা চলে যাচ্ছ না কেনো?
--এই যায়গা ছেড়ে যাবো কোথায় বাবু? যাওয়ার তো আর কোনো যায়গা নাই। একমাস আগে আমার পোলাটাও জঙ্গলে হারায়া গেছে। পোলাটা যদি ফিরা আসে আর যদি আমাদের খুইজা না পায়! তাই যাইনি কোথাও।
--তোমার ছেলেও জঙ্গলে হারিয়েছে?
--হ বাবু। জঙ্গলের ভিতরে যে কোন পিচাশ আছে তা উপরওয়ালাই ভালো জানেন।
..আমি আম্রাথুকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
--তুমিকি তোমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাও?
--কেনো চাইবো না? আমার স্ত্রী দিন রাত তো শুধু কান্দে। পোলার শোকে সেও শেষ।
--তোমার ছেলেকে ফিরে পেতে হলে আগে জঙ্গলে কি হচ্ছে সেটা জানা দরকার। আজকে রাতে জঙ্গলে যাবে আমার সাথে?
--আপনিতো দেখি বিরাট সাহসী পোলা বাবু। কিন্তু এই জঙ্গলে যারাই সন্ধ্যার পর গেছে তারা কেউ ফিরে আসতে পারেনি। আমার মনে হয় না যাওয়াই ভালো।
আমি আম্রাথুর কথায় রাগ দেখিয়ে বললাম ..
--কাপুরুষের মতো কথা বলোনা। তোমার সন্তানকে ফিরে পেতে হলে জঙ্গলেই খুজতে হবে আর রাতের বেলায়। কারণ দিনে সবকিছু সাভাবিক থাকে।
--আপনি অবশ্য ঠিকই বলছেন বাবু। কিন্তু খুব ডড় করে বাবু। না জানি আমরাও মইরা যাই।
--আরে এতো মরার ভয় করো কেনো? ভয়কে আগে জয় করতে শিখো। তাছাড়া জঙ্গলের বাইরে থেকেও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই বাচার। যখন তখন তুমিও হারিয়ে যেতে পারো।
--তা ত জানি বাবু। কিন্তু কি আর করবো কন। এই জায়গা ছেড়ে কোথাও যাইতেও পারমু না।
.
আম্রাথুর সাথে এভাবে কথা বলতে বলতে প্রকৃতি দেখছিলাম। দেখতে দেখতে একসময় সেই জঙ্গলের সামনে চলে এলাম আমরা। আমি পকেট থেকে ফোনটা অন করে ছবির সাথে মিলাতে লাগলাম। একদম এই অবস্থানে জঙ্গলটার,সাথে ছবিটা পুরোপুরি মিলে গেলো। তবে জঙ্গলের ভিতরে কিছু ছবি থাকলে আরো ভালো হতো।
.
--বুঝলেন বাবু, আগে এই জঙ্গলে বহুত জন্তু জানোয়ার ছিলো। এখন পিচাশের ডরে সেগুলাও উধাও হইয়া গেছে। মনে হয় পিচাশ সবাইরে খাইছে। এখন গাছ গাছরা ছাড়া আর কিছুই দেখার মতো নাই এই জঙ্গলে। পাখিও খুব একটা দেখা যায়না। জঙ্গলটারে এখন শ্মশানের মতো লাগে। ছোটবেলা থেকে এখানে আমি কাটিয়েছি। অনেক মানুষ এই জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে পর্যটকও ছিলো অনেক। আগেও মানুষ হারাইতো তবে খুব কম। সবাই ভাবতো জানোয়ারের পেটে গেছে। কিন্তু এখন জানোয়ার নাই তাও মানুষ হারায়। আপনি কন বাবু এইটা পিচাশের কাজ ছাড়া আর কি হইতে পারে!
--হ্যাঁ সেইটা জানার জন্যই আজ আমরা জঙ্গলে যাবো।
--বাবু আমার ছেলেকে খুজে পাবোতো?
কথাটা বলে কেদে ফেললো আম্রাথু
--ভরসা রাখো।
সান্তনা দিয়ে বললাম আমি।
.
এরপর আমি আর আম্রাথু তার গৃহে ফিরে গেলাম। কিন্তু বিকেল না গড়াতেই আসাদ রিমি আর রাহাত এসে আম্রাথুর বাসায় হাজির। আমিতো তাদের দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আসাদ আমার কাছে এসেই গালে ঠাস করে একটা বসায়া দিলো। পাশ থেকে রিমি বলে উঠলো ...
--অন্য গালে আমার তরফ থেকে একটা দিয়ে দে।
আসাদ হুংকার করে বললো ...
--হারামি এই তোর পরিচিত ভাই?
আম্রাথুর দিকে ইশারা করে বললো কথাটা।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। এদের কাছে মিথ্যা বললেই ধরা খাইতে হয়। আমি ডালে ডালে চললে এরা যায় পাতায় পাতায়। রিমি এইবার আমার কাছে এসে বললো ...
--খালিদ তুই কি আমাদের একটুও বন্ধু ভাবিস না? আমাদেরকে সাথে নিয়ে আসলে কি হতো? আগে আমরা কতো এরকম এডভেঞ্চার করতাম। তুই কি আগের দিন ভুলে গেছিস?একাই একশো হয়ে গেছিস তাইনা?
--আসলে তোমাদের রিস্কে ফেলতে চাইনা। তাই এ ব্যপারে কিছু জানাইনি। কিন্তু তোরা এতকিছু কিভাবে জেনে গেলি?
আসাদ এবার হাসতে হাসতে বলতে লাগলো ...
--সকালে তোর ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারছি তুই মিথ্যা বলছিস। মিথ্যা বলার সময় তোর কান লাল হয়ে যায় এইটা আমি জানতাম। সকালেও তাই দেখলাম। আর তোকে ফলো করতে গিয়ে শারিফ আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে দেখি। তুই চলে আসার পর সবাই মিলে উনাকে ধরে ব্যপারটা জানতে পারলাম। তুই একা একাই এডভেঞ্চার করবি তা কি করে হয় বন্ধু ..
রাহাত ও আর চুপ রইলো না ..
--ভাইয়া এইটা আমার প্রথম এডভেঞ্চার হবে। আমার খুব এক্সাইটেড ফিল হচ্ছে।
--আমার বা*
মেজাজটা বিগরায় গেলো আমার।
--তোমরা যতোটা ইজি ভাবছো ততটা ইজি নয় ব্যপারটা। অনেক রিস্কি। জান নিয়ে ফিরে আসা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ।
রিমি মাথাচাড়া দিয়ে বললো..
--সে যা হবার হবে। এডভেঞ্চার এ এরকম হয়েই থাকে। তোকে এতো ভাবতে হবেনা।
সবাই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। ছোট ভাই রাহাতের উত্তেজনা দেখার মতো। পরে ঠেলা বুঝবে একেকজন।
.
এরপর সবাই আম্রাথুর গৃহে খাবার খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। সবাই সবার ব্যাগে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিলাম। বড় বড় কয়েকটা টর্চ লাইট আমার সাথেই থাকে। তাছাড়া আমার হ্যান্ডগানটাও নিলাম সাথে। প্রয়োজনে কাজে লাগবে।
.
এরপর সবাই মিলে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে আম্রাথুর গৃহ থেকে প্রস্থান করলাম। আমার এডভেঞ্চার সঙ্গী হলো .. আসাদ রাহাত রিমি আর আম্রাথু। কপালে কি অপেক্ষা করছে জানিনা তবে রহস্য উদ্ঘাটন করতেই হবে।
.
.
------চলবে------
Reactions

Post a Comment

0 Comments