---মিরাকল মিশন :ফরেস্ট মিসট্রি


-----লেখকঃ Khalid Hasan ---

--------ষষ্ঠ পর্ব --------

.

ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা ছয়টা।সবাই একসাথে দাড়িয়ে আছি জঙ্গলের প্রবেশ পথে। ঘন জঙ্গল।
--এই জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুক নেইতো! ভয়ে ভয়ে বললো রিমি।
--তোর যদি ভয় লাগে তো এখনো ফিরে যা। এই জঙ্গলের ভিতরে ঢুকলে আমাদের কপালে কি আছে তা কেউ জানেনা।
একটু রাগ দেখিয়ে বললাম আমি।
পাশ থেকে আম্রাথু রিমিকে উদ্দেশ্য করে বললো
--না না আফা এই জঙ্গলে জন্ত জানোয়ারের কোনো ভয় নাই।
রিমি একটু সাহস পেলো আম্রাথুর কথায়।
আসাদ একটু বেশিই সাহস দেখিয়ে বললো
--ধুর তেরি ভয়।জঙ্গলের বাইরে দাড়িয়ে এতো ভয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করে ভিতরে চল সবাই। পরে যা হবার দেখা যাবে।
রাহাতও উত্তেজনার সহিত আসাদের কথায় সায় দিলো।
পরে তোদের উত্তেজনা বের হবে। কথাটা মনে মনে বললাম আমি।
--ওকে চলো সবাই ভিতরে যাওয়া যাক।
সবাইকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করতে লাগলাম ।
.
সূর্যটা শেষ আকাশে আর দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে । এমনিতেই অন্ধকার তার উপর জঙ্গলের ভিতরের ঘোর অন্ধকার টা আরো গাঢ়ো হয়ে গেছে। পাচজনের হাতে পাচটা টর্চ দিলাম আমি। জঙ্গলের ভিতরে একটা সরু রাস্তা। সম্ভবত জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আগে এই পথে যাতায়াত করা হতো। সেই পথেই এগুতে লাগলাম আমরা। আমার গা ঘেষে চলতে লাগলো রিমি। অনেক ভয় ওর মনে। কিন্তু উত্তেজনাও কম না। হাটার সময় শুকনো পাতার মরমর শব্দ হতে লাগলো। শব্দহীন জঙ্গলে তা যেনো অনেক জোড়ালো শোনা যাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই শুধু নিঃশব্দে টর্চের আলোয় এগিয়ে চলছি আমরা। টর্চের আলো দিয়ে জঙ্গলটা দেখতে লাগলাম। বাইরে থেকে যতটা ঘন মনে হয়েছিলো এখন তার চেয়েও বেশি ঘন মনে হচ্ছে।গাছের লতাপাতায় ছেয়ে আছে। কোথাও একটু ফাকা জায়গা নেই। আমরা শুধু সেই সরু পথটা দিয়ে চলছি আর টর্চের আলোয় দুপাশের জঙ্গল দেখছি। হঠাৎ গাছের উপর কিছু একটার ডানা ঝাপটানোর শব্দ পাওয়া গেলো। রিমি ভয় পেয়ে আমার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সবাই থেমে গেলাম। আসাদ গাছের আগায় টর্চ ফোকাস করলো। কিন্তু কিছু দেখা গেলো না। আমি রিমিকে অভয় দিয়ে বললাম ...
--এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো! পাখি ছিলো হয়তোবা।
--কে বলেছে আমি ভয় পেয়েছি! এইটুকুতে রিমি চৌধুরী ভয় পায়না।
মুখ ভেংচি কেটে বললো কথাটা।
--ও আচ্ছা। হাত এতো শক্ত করে ধরেছিস তাই মনে হলো ভয় পেয়েছিস।
রিমি লজ্জা পেয়ে গেলো। হাত টা তখনি ছেড়ে দিলো।পাশ থেকে রাহাত মসকরা করে বললো..
--ধরে থাকুক না, মেয়ে মানুষ তো একটু তো ভয় পাবেই।
--রাহাত আস্তে কথা বল। আমরা গভীর জঙ্গলে আছি।
রাহাতকে থামিয়ে দিয়ে বললাম আমি।
--এখানে থেমে না থেকে চলতো সামনের দিকে। আমাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বললো আসাদ।
.
আবার চলতে লাগলাম। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। একটা রেলগাড়ির মতো তৈরি করে এগোচ্ছি।মানে সবাই লাইন করে এগোচ্ছি। মনে হচ্ছে যেনো আমরা যেনো রেলগাড়ির একেকটা বগি। সামনের জন যেখান থেকে পা উঠাচ্ছে পেছনের জন সেখানে পা ফেলছে।সবার প্রথমে আমি তারপর রিমি। আসাদ আর রাহাত তারপর আর সব শেষে আম্রাথু। আমি এই জঙ্গলে এর আগে প্রবেশ করিনি। তাই পথ চিনতে অসুবিধা হচ্ছে। আমার মনে হয় আম্রাথুকে সামনে নিয়ে আসা উচিৎ। আম্রাথুকে ডাকতে যাবো এমন সময় আবার একটা শব্দ হলো কিছুটা কাছেই ...
-- হুদ ... হুদ ... হুদ
অনেক অদ্ভুত তো!সবাই চমকে গিয়ে আবার থমকে দাড়ালাম। রিমি আবার আমার হাত ধরলো। টর্চের আলো দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। শব্দটা পাশের কোনো একটা জায়গা থেকেই এসেছে। কিন্তু কিছুই দেখলাম না। সবাইকে অভয় দিয়ে বললাম ..
--সম্ভবত প্যাঁচার ডাক ছিলো। চলো সামনে এগোনো যাক।
রিমি হাত ছেড়ে দিলো। আবার হাটতে লাগলাম সবাই। কিন্তু কিছুদুর যেতেই আমার খটকা লাগতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে কিছু একটা গর্বর হয়ে গেছে। অনেক্ষণ থেকে আম্রাথুর কোনো সাড়া পাচ্ছি না। সবাই কথা বলছে কিন্তু আম্রাথু বলছে না কেনো! হঠাৎ আসাদ বলে উঠলো ..
--আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে কেউ একজন মিসিং ..
--আম্রাথু, হ্যাঁ আম্রাথু কই? তোর পিছনেই তো ছিলো ও?
চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি। পিছনের পথে টর্চের আলো ফেললাম, না কিছুই নেই। আম্রাথুর কোনো চিহ্ন নেই। সবাই থেমে গিয়ে টর্চের আলো দিয়ে এপাশ ওপাশ ফোকাস করতে লাগলাম। রাহাত আমাকে বললো ...
--ভাইয়া, মনে হয় লোকটা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেছে।
--প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেছে মানে? আমাকে না জানিয়ে ও যাবে কেনো? আমি এই এডভেঞ্চার এর ক্যাপ্টেন। আমাকে না জানিয়ে কিছুই করবে না তোমরা।
..রাগান্বিত হয়ে বললাম কথাগুলো
--মনে হয় লজ্জায় বলেনি।
মুচকি হেসে বললো রিমি
--চুপ কর তুই, মাথামোটা। ও যদি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেতো তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে জানাতো। আমার মনে হয় আমাদের থেকে কেউ ওকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। নাহলে ও এভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারেনা।
--হ্যাঁ আমারো তাই মনে হচ্ছে।
আমাকে সাপোর্ট করে বললো আসাদ।
চিন্তার মাত্রা বেড়ে গেলো আমাদের। আমাদের একজন সঙ্গী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানে অনেক বড় চিন্তার ব্যপার আর তারও বেশি চিন্তার ব্যপার হলো কিভাবে সে হারিয়ে গেলো।
--আমার মনে হয় আমাদের এখানে থাকাটা ঠিক হবে না। চল ফিরে যাই সবাই। কাল দিনে এসে লোকটাকে খুজে নিয়ে যাওয়া যাবে।
কথাগুলো বললো রিমি।
--মাথামোটা তাহলে ঢুকার আগেই ফিরে যাওয়া উচিৎ ছিলো। এখন চুপ কর।
বললাম আমি।
...আসাদ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো ...
--এখন কোনদিকে যাবি ভাবছিস? পিছনের দিকে গিয়ে লোকটাকে খুজবি নাকি সামনের দিকে এগোতে থাকবি?
আমি একটা বড় ধরণের চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিছুক্ষণ চিন্তা করতে লাগলাম।
.
কিছুক্ষণ পর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম ..
--মূলত এখানে আমাদের আসার উদ্দেশ্য টা হচ্ছে এই জঙ্গলের রহস্য উদ্ঘাটন। লোকটা যেভাবে গায়েব হয়েছে তা এই জঙ্গলের রহস্যেরই একটা উদাহরণ। তাই আমার মনে হয় লোকটাকে খুজে বের করাই এখন আমাদের উদ্দেশ্য। তবে আমরা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে যাবো। এক গ্রুপ পিছনের দিকে যাবে লোকটাকে খুজে বের করার জন্য আর এক গ্রুপ সামনের দিকে এগোতেই থাকবে।
.
কথাগুলো বলে আসাদের দিকে তাকালাম।আসাদ বললো..
--তাহলে আমি আর রাহাত পিছনের দিকে যাবো। তুই আর রিমি সামনের দিকে এগোতে থাক।
--হুম, লোকটার হদিস পেলে আমাকে ফোন দিবি।
আসাদ ফোন বের করে দেখতে লাগলো ..
--দোস্ত জঙ্গলে নেটওয়ার্কের গুষ্টি নাই।
--তাহলে ফোন দিতে হবেনা। খুজে পেলে আবার সামনের দিকে হাটতে থাকবি। আমরা আস্তে আস্তে হেটে যাবো। আর যদি খুজে না পাস তাহলে জোরে জোরে পা চালিয়ে আমাদের নাগাল ধরবি আবার।
.
আসাদ আর রাহাত পিছনের দিকে যেতে লাগলো। আমি আর রিমি সামনের দিকে যেতে লাগলাম। টর্চের আলোয় পথ দেখে দেখে চলতে লাগলাম।
--ওদেরকে আলাদা করা কি ঠিক হলো? যদি ওরাও গায়েব হয়ে যায় লোকটার মতো। তাহলে তো দলের আর কিছুই থাকবে না।
..চিন্তাযুক্ত মন নিয়ে কথাগুলো বললো রিমি।
--এখন এতকিছুর ভাবার সময় নেই। আমাদের গ্রুপ হিসেবেই ভাগ হতে হবে।
আর কিছু না বলেই আমি সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কিছুদুর যেতেই সরু রাস্তাটার উপর টর্চের আলোয় অবাক করার মতো কিছু দেখলাম। থেমে গেলাম আমি সাথে সাথেই।
--কিরে থামলি কেনো? প্রশ্ন করলো রিমি।
আমি কিছু না বলেই বসে পড়লাম। মাটিতে আলো ফেলে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।
--আমার মনে হচ্ছে এই রাস্তা দিয়ে একটু আগেই কেউ হেটে গেছে। অনেকগুলো জুতোর ছাপ দেখা যাচ্ছে।
আমার কথা শুনে রিমিও বসে পড়লো। জুতোর ছাপগুলো সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। আমি রিমিকে বললাম ..
--তোর একটা জুতো খুলে দে।
--কেনো জুতো দিয়ে কি করবি?
--আরে এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি দে।
রিমি জুতো খুলে দিলো। আমি আমার পা থেকেও একটা খুলে নিলাম। এরপর আমাদের জুতোর কয়েকটা ছাপ লাগালাম মাটিতে। আগের ওই ছাপগুলোর সাথে মিলে যাচ্ছে।
--রিমি, একটু আগে আমরাই এই পথ দিয়ে গেছিলাম। এখনো আমরাই যাচ্ছি।
--কি বলিস?
--হ্যাঁ ,এই জুতার ছাপগুলো আমাদেরই।আমরা মনে হয় আমরা একটা গোলক ধাধার মাঝে পড়ে গেছি। একই রাস্তায় বার বার ঘুরছি।
রিমি আমার কথায় কিছু বলছে না। একটু পরেই সে বলে উঠলো ..
--খালিদরে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।আমার কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে।এখন আমরা কি করবো?
--সামনের দিকেই এগোবো।ভয়কে আপাতত একটু ছুটি দে।
কথাটা বলেই হাটতে লাগলাম আবার। রিমি এবার শক্ত করে আমার হাত ধরে রাখলো। আমি কিছু বললাম না। বেচারি এবার অনেক ভয় পেয়েছে বুঝলাম। ভয় যে আমি পাচ্ছিনা তা নয়। এই গভীর জঙ্গলে এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ ভয় পাবে।
আবার হাটতে লাগলাম।
আবার কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলাম।
টর্চের আলোয় দেখলাম পথের ধারে একটা টর্চ লাইট পড়ে আছে।
--রিমি হাত ছাড়
--কেনো কি হলো? আবার থামলি কেনো?
--হাত ছাড় .. আর সামনে দেখ একটা টর্চ লাইট পড়ে আছে।
--হ্যাঁ তাইতো!
আমি টর্চ টা উঠিয়ে নিয়ে দেখতে লাগলাম। নিভে গেছে। টর্চের সামনের দিকটা ভেঙ্গে গেছে।আর সেখানে লেগে আছে রক্ত। মনে হচ্ছে কেউ আঘাত করে ভেঙ্গেছে। তবে টর্চটা যে আমাদেরই সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কারণ আমাদের সবগুলো টর্চ একই আর এটাও তারই একটা। সম্ভবত আম্রাথুকে দেয়া টর্চটা এটা। কিন্তু আম্রাথু কোথায়?
.
হঠাৎ দূরে আলোর ঝলকানি দেখতে পেলাম আমরা। রিমি আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো।
--ওই দেখ কারা যেনো আসছে এদিকেই।
আমি তাকিয়ে দেখতে লাগলাম।আমাদের টর্চগুলো নিভিয়ে ফেললাম। শুধু নীরবে আড়ালে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। লোকগুলো এদিকেই আসছে। টর্চের আলো ছড়াছড়ি করছে আর কার নাম ধরে যেনো ডাকছে। দুজনে আড়াল থেকে কান পেতে রইলাম তাদের দিকে।
.
_____চলবে_____
Reactions

Post a Comment

0 Comments