--লেখকঃ Khalid Hasan---
--------চতুর্থ পর্ব --------
.সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে এসে সবাইকে খাওয়ালাম। আমার উদ্দেশ্য টা এখনো কাউকে জানাইনি। তবে সবাই এসেছে ঘুরাঘুরি করার জন্য। ওদেরকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। তা নাহলে আবার চিল্লাচিল্লি শুরু করবে সবাই। আমার মিশন নিয়ে আমি রাতে কাজ করবো। আর গোপণে করলেই ভালো হয়। এখনো আমি রহস্য সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। তবে রাতে কাজে নামবো এই ভেবে রাখলাম। আর দিনে সবাইকে নিয়ে পার্বত্য এলাকাটা ঘুরতে বের হলাম। তারপর অনেক ঘুরাঘুরির পর সন্ধ্যায় রেস্টহাউস এ ফিরে এলাম।
.
রাতে সবাই ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো। আজ আর রিমি তেমন বায়না করলো না। অনেক ঘুরাঘুরির পর ক্লান্ত হয়ে খুব জলদি ঘুমিয়ে গেছে সবাই। আমার জন্য সেটা ভালোই হয়েছে।
.
আমি রেস্টহাউস থেকে বের হয়ে শরিফ সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলাম। উনার দেখাও পেলাম।উনার চোখে কালো চশমা টা লাগানো। মনে হয় কখনো খুলেন না। উনার গেস্ট রুমে গিয়ে উনি আমাকে বসতে দিলেন।তারপর তিনি নিজেই জিজ্ঞেস করলেন ..
--কেমন আছো বাবা?
--জী ভালো। আপনি কেমন আছেন?
--ভালো বাবা। তো তোমাদের ঘুরাঘুরি কেমন হচ্ছে?
--আঙ্কেল আপনার কি এখনো মনে হচ্ছে আমি এখানে ঘুরাঘুরি করতে এসেছি?
শরিফ সাহেব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ..
--আমি জানি তুমি এখানে এসেছো একটা রহস্য খুজতে।
--কাল রাতে আপনাকে একটা জঙ্গলের ফটো দেখাতেই আপনি আমাদের থাকতে দিলেন। আমার মনে হচ্ছে আপনি জঙ্গল টা সম্পর্কে জানেন।
--হ্যাঁ তবে খুব বেশি কিছু জানিনা। কয়েক বছর আগেও একজন এই একই ফটো আমাকে দেখিয়েছিলো। আর তোমার মতো সেও বলেছিলো এই ফটোটা নাকি তার মিশন। আমার রেস্টহাউস এ তাকে থাকতে দিয়েছিলাম। তবে সে তার মিশন সাকসেস করতে পারেনি। অসুস্থতার কারণে চলে যায়।
..আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে দাদুর একটা ফটো বের করে দেখালাম।
--দেখুন তো ইনিই কি সেই লোক?
শারিফ সাহেব দাদুর ফটো দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
--এনাকে তুমি চিনো?
--হ্যাঁ উনি আমার দাদু ছিলেন।
--ছিলেন মানে?
আমার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। বললাম।
--উনি কদিন আগে মারা গেছেন।
--অহ সরি ইয়াংম্যান।
-ইট্স ওকে আঙ্কেল। এখন আপনি আমাকে এই জঙ্গলটা সম্পর্কে বলুন। আসলে কি রহস্য ঘটছে সেখানে আমার সবকিছু জানতে হবে।
--হ্যাঁ.. তবে যেটুকু জানি সেটুকুই বলতে পারবো।
--ঠিক আছে।
শারিফ সাহেব উনার চশমাটা খুলতে খুলতে বললেন ...
--কিছু মনে করো না আর ভয় পেয়ো না। চশমাটা পরে থাকতে খুব অসস্তি লাগে।
--আপনি চশমাটা খুলুন আমার কোনো সমস্যা নেই।
শরীফ সাহেবের নষ্ট চোখটা আবার দেখতে হলো। তবে ভয় লাগলো না। লোকটা বন্ধুসুলভ আছে। চোখের ব্যাপারটা যাইহোক না কেনো।
এরপর শরীফ সাহেব উনার চশমাটা খুলে বলতে লাগলেন ...
--আসলে তুমি যে জঙ্গলটা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছ তা এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তবে জঙ্গলটা অভিশপ্ত। বেশ কয়েক বছর ধরে জঙ্গলের ভিতর রহস্যময় ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রথম দিকে যে ঘটনাটি শুনেছিলাম তা হলো, কয়েকজন লোক জঙ্গলে কি একটা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলো।তখন প্রায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো। হঠাৎ তারা কিছু আজগুবি শব্দ শুনে। এরপর তারা দৌড়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু তারপর দেখে তাদের মাঝে একজনকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ব্যক্তি হয়তো জঙ্গলেই রয়ে গেছে। পরবর্তীতে তারা অবশ্য সেই ব্যক্তিকে জঙ্গলে খুজতে গেছিলো কিন্তু পায়নি। লোকটা মরে গেলে বা হিংস্র প্রাণীরা খেয়ে ফেললে অন্তত রক্তাক্ত জামাকাপড় পাওয়া যেতো কিন্তু সেই লোকের মৃত দেহ তো দূরের কথা কিছুই পাওয়া যায় নি। এরপর প্রায়ই অত্র এলাকায় রাতের বেলা মানুষ হারিয়ে যেতো। যারা হারিয়ে যেতো তাদের কাউকেই আর খুজে পাওয়া যেতো না। অনেক মানুষ সেই জঙ্গলের ভিতরেই হারিয়ে গেছে। এরপর মানুষ জন জঙ্গলটাকে অভিশপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। আর জঙ্গলের আশেপাশের এলাকাটা খালি করে দেয়। আমি শুনেছি এখনো সেই জঙ্গলে এমন অভিশপ্ত ঘটনা ঘটে। আমি এর বেশি কিছু জানিনা।
--এটুকুই যথেষ্ট আঙ্কেল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমি ঘরের দেয়ালের দিকে দেখলাম শরিফ আঙ্কেলের একটা যুবক বয়সের ছবি। ছবিতে উনার দুইটা চোখই ভালো।
--আঙ্কেল আপনার চোখদুটো আসলে অনেক সুন্দর। হা হা... কি যে বলো! কিভাবে বুঝলে সুন্দর?
দেয়ালে ঝুলন্ত ছবিটি ইশারা করলাম।
--হা হা হা.... ইয়াঙ্গম্যান, ওইটা আমার ছবি নয় আমার জমজ ভাইয়ের ছবি ওইটা।
--ওহ আচ্ছা। তবে আপনার গুলোও অনেক সুন্দর।
শারিফ সাহেব মাথা নিচের দিকে করে মলিন সুরে বললেন..
--হয়তোবা
বলতে বলতে তিনি কালো চশমাটা পড়তে লাগলেন।
.
শরীফ সাহেবের মলিন চেহারা দেখে আর কিছুই বললাম না। আমিও একটু চুপ করে রইলাম। তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন ..
--তাহলে ফাইনালি কি ঠিক করলে? সেই জঙ্গলে যাবে?
--যাবো তো অবশ্যই। সেখানে যাওয়ার জন্যই এতদূর আসা।
--দেখ দিনের বেলা হয়তো জঙ্গলটা সবকিছুই নরমাল। কিন্তু আধাঁর নামার সাথে সাথেই রহস্যের শুরু। তারপর সেখানে অবস্থান করলে মৃত্যু অনিবার্য। জেনে শুনেও এমন ডিসিশন নেওয়াটা কি বোকামি হচ্ছে না?
--দেখুন আজ পর্যন্ত কেউ এই জঙ্গলের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। কাউকে না কাউকে তো সেটা সমাধান করতে হবে।
--তোমার মধ্যে কনফিডেন্ট বেশি মনে হচ্ছে।
--ওভার কনফিডেন্ট ও বলতে পারেন। আত্মবিশ্বাস না থাকলে উদ্দেশ্য সফল হবে কি করে আঙ্কেল।
--তা অবশ্য ঠিকই বলেছো তুমি।
--আসলে যে রহস্য আমার মাথায় একবার আসে আমি তা সমাধান না করা পর্যন্ত থামি না। এটারও সমাধান করবো ইনশাল্লাহ।
--নিজের ব্যপারে নাহয় না ভাবলে কিন্তু নিজের বন্ধুদের জীবন ঝুকিতে ফেলছো কেনো?
শরিফ সাহেবের প্রশ্ন শুনে একটু চিন্তা করে বললাম ..
--আসলে ওরা এখনো এ ব্যপারে জানেনা। মিশনটা আমার একারই। আর আমি একাই কাজ করবো।
.
হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আসাদের নাম্বার থেকে ..
--হ্যালো খালিদ তুই কোথায়?
--কেনো? আছি আশেপাশে কোথাও।
--তুই যেখানেই থাকিস জলদি আয়। রিমি ঘুম থেকে জেগে গেছে আর তোকে খুজতেছে। একা একা থাকতে নাকি ওর ভয় করছে।
--তাহলে তুই গিয়ে শুয়ে পড়না ওর সাথে।
--আমি যেতে চাইছিলাম কিন্তু বেচারি বলে তুই ছাড়া থাকবেনা।
--ফোন রাখ শালা।
একটা ধমক দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম।
.
উফ এই মেয়েটাতো দেখি পাগল করে দিবে আমায়। মেজাজটা দিন দিন বেশিই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শরিফ আঙ্কেল কে উদ্দেশ্য করে বললাম ...
--আমার বন্ধুরা আমাকে খুজছে। আমার যেতে হবে। আপনার কাছে একটা অনুরোধ আপনি ওদেরকে এ ব্যপারে কিছু বলবেন না প্লিজ।
--আচ্ছা ঠিক আছে।
.
এরপর উনার কাছে বিদায় নিয়ে রেস্টহাউস এ গেলাম। সবাই আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আবার সেই সোফায় রাত কাটাতে হবে। রিমির উপর একটা রাগি ভাব নিয়ে বললাম ...
--চলেন মহারানী। আপনার জন্য নিজের ঘুমকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। সোফায় ঘুমানো অভ্যাস নেই আমার আপনি তো সেটা বুঝবেন না।
রিমি একটা লজ্জাভাব নিয়ে বললো ...
--তুই চাইলে কিন্তু আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারিস। হিহিহি।
শালি শরম লজ্জার মাথা খাইছে। ভাগ্যিস ছোট ভাই রাহাত ঘুমিয়ে গেছে। নাহলে এই মেয়ে আমার ভাইয়ের সামনে লজ্জায় ফেলে দিতো।
.
অগত্যা আবার সেই সোফায় রাত কাটাতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম কাল যেভাবেই হোক সেই অভিশপ্ত জঙ্গলের দিকে রওনা দিতে হবে আমাকে।
.
.
-----চলবে------
0 Comments
please Wait