--লেখকঃ Khalid Hasan ---
--------দ্বিতীয় পর্ব --------
.পরের দিন সকাল সকাল আমি চারটা টিকেট বুকিং দিলাম।অনেক দূরের যাত্রাপথ। আগে ভাগেই টিকেট না নিলে ভেজালে পড়তে পারি। টিকেট বুকিং দিয়ে এসে আবার একটা ঘুম দিলাম। প্রায় দুপুরের দিকে ঘুম ভাংলো আমার। ঘুম ভেংগে দেখলাম আসাদ আমার রুমে বসে আছে। ও আমার পিসিতে গেইম খেলছে।
--কিরে কতক্ষণ হয় এসেছিস?
--অনেকক্ষণ। যা ঘুমাচ্ছিলি তাই ডাকার ইচ্ছা হলোনা।
--রিমি কই?
--ও তো কিচেনে। আন্টির সাথে গল্প করছে।
মনে মনে ভাবছি..
না জানি গাধী মেয়েটা আমাদের কলেজ লাইফের কতো বাজে হিস্টরি শুনাচ্ছে আম্মুকে। মেয়েটার পেটে তো কিছু চাপা থাকেনা।
.
আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে গেলাম। রাহাতও এসে গেলো এই ফাকে।রিমিকে অনেকদিন পর দেখলাম। আগের থেকেও অনেক সুন্দরী হয়ে গেছে মেয়েটা। কথাও হলো ওর সাথে। আগে যেমন ছিলো এখনো তেমনি আছে। পুরাই গাধী। এরপর সবাই একসাথে খাওয়ার পর আমি আমার রুমে ব্যাগ গুছাতে লাগলাম। বিকেল পাচটায় বাস। এখনো রেডী হইনি আমি। তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে নিতে লাগলাম সব। সবাই আমার রুমে বসে আছে।
রিমি হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো..
--আসলে আমরা যাচ্ছি কোথায়?
--অনেক দূরে যাচ্ছি এবার। গাড়ি নিয়ে গেলে অনেক ঝামেলা হতে পারে তাই বাসেই যাবো।
টিকেট বুকটা ধরলাম ওদের সামনে। রিমি হাতে নিয়েই এক নজর দেখেই চিৎকার করে বললো
--ওয়াও !!!!!
--একটা পার্বত্য অঞ্চলে যাচ্ছি আমরা। সেখানে যাওয়া হয়নি এর আগে কখনো। শুনেছি প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর একটা যায়গা। দেখার অনেক কিছুই আছে।
.
..কথাগুলো বলেই ব্যাগ গুছানো শেষ করলাম আমি। প্রাকৃতিক দৃশ্যের আড়ালে যে ভয়ানক দৃশ্য আছে সেটাই দেখতে চলেছি আমি। তবে বিষয়টা ওদের কাউকে জানালাম না। এরপর বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আমরা বাস স্টপের দিকে। বাসে উঠে বসতে যাবো এমন সময় আরেক কাহিনী। চারটে সিট একই সাথে কিন্তু রিমি আমার সাথে বসার বায়না ধরেছে। বাচ্চারাও এমন করেনা। এমনিতেই মেজাজটা ওর উপরে একটু চড়াও আছে। অগত্যা ও আমার পাশে বসলো। তবে ও জানালার পাশে বসলো। আর আমি ওর পাশের সিটে। গাড়ি ছাড়ার পর একটু নীরবতা। রিমি নীরবতা ভাঙ্গার জন্য আমার সাথে কথা বলতে লাগলো ...
--খালিদ তুই কথা বলছিস না কেনো?
--আমাকে দেখে কি তোর বাচাল মনে হচ্ছে নাকি!
--তুই একদম আগের মতো আছিস। চাপা সভাবের। কথা বলতে কবে শিখবি?
আজব বলে কি!
--তাহলে মুখ দিয়ে এইসব কি বলতেছি?
--আহা আমি এই কথা বুঝাইনাই। আসলে তুই প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথাই বলিস না।
--তোর সাথে বলতে কারো সাথেই বলি না। অতিরিক্ত কথা বলা পছন্দ না।
রিমি একটু মন খারাপ করলো আমার কথায়।চেহারা দেখে যা মনে হলো আরকি। আবারো কিছুক্ষণ নীরবতা। আবার বলে উঠলো ..
--তোর যদি খুব ঘুম পায় তাহলে তুই আমার কাধেঁ মাথা রেখে ঘুমাবি কেমন?
--কাধেঁ মাথা রেখে ঘুমানোর অভ্যাস নাই আমার।
--কিন্তু আমার তো আছে। বিরবির করে বল্লো রিমি।
এই মেয়ে তো ভারী মুশকিল। নিজেই আমার কাধেঁ মাথা রেখে ঘুমানোর মতলব করছে। আর উল্টো আমাকেই সাধছে ওর কাধেঁ আমার মাথা রাখার জন্য।
.
রিমি আমার ভাবমূর্ত্তির উন্নতি না পেয়ে মন খারাপ করে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো।আর আমি ওর উড়ন্ত চুলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাদের পেছনে আসাদ আর রাহাত জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখছে। আর গল্প করছে ওরা দুজন। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। হঠাৎ রিমি আমার দিকে তাকালো চিন্তাযুক্ত মুখ নিয়ে ...
--কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? জিজ্ঞেস করলাম আমি।
--খালিদরে আমার প্রবলেম হচ্ছে।
--কি প্রবলেম?
--আমার বমি বমি ভাব হচ্ছে।
.
মেয়ের কথা শুনে আমার মেজাজ টা খারাপের উত্তম পর্যায়ে যেটাকে সীমার ধৈর্য্য বলে আরকি থুক্কু ধৈর্যের সীমা হবে, সেইখানে গিয়ে ধাক্কা মারলো। আমি ব্যাক সীটে মাথা ঘুরিয়ে আসাদের দিকে তাকালাম। আমি তাকাতেই আসাদ আমার দিকে তাকিয়ে তার চব্বিশ পাটি দাত বের করে একটা হাসি দিলো। ইচ্ছা হলো আসাদের গালে শপাং করে একটা বসায় দেই। সালা এমনিতেই এই উগান্ডার পাগলিকে গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে আর এখন মজা নিচ্ছে। তারপর নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলাম। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য লেগে পড়লাম। এরপর মহারানীর আরামছে বমি করার একটা ব্যবস্থা করে দিলাম।
.
ঘড়িতে যখন রাত বারোটা তখন সবার চোখেই একটা তন্দ্রা ভাব। গাড়ি এক জায়গায় দাড়ালো। সেখান থেকে ডিনার সেরে নিলাম আমরা। এরপর গাড়িতে উঠেই একটা ঘুম এর প্রস্তুতি নিলাম। মহারানী এরপর অবশ্য বমি করার ইচ্ছাটা ব্যক্ত করেনি।
.
রাতে কখন ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই। তবে যখন ঘুম ভাংলো, লক্ষ করলাম আমি রিমির কাধেঁ মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলাম। জেগে উঠেই দেখলাম রিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে।সকাল হয়েছে অনেক আগেই।
.
আমি নিজেকে সাভাবিক অবস্থায় নিলাম। সবাই এখনো ঘুমুচ্ছে। আরো কিছুটা পথ বাকি। তারপরই পৌছাবো গন্তব্যে। রিমি বলে উঠলো ..
--কাধেঁ মাথা রেখে ঘুমানোর নাকি অভ্যাস নেই আপনার! দেখলামই তো।
আমি কিছু বল্লাম না। গাধীটা যখন একটু পৈচাশিক আনন্দ নিতে চাচ্ছে তো নিকনা।
.
গন্তব্যে পৌছানোর পর আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেলের সন্ধানে বেরোলাম সবাই।
কিন্তু দুঃখের কথা কি আর বলবো, সারাদিন গরু খুজা খুজেও কোনো হোটেল রুম ফাকাঁ পেলাম না। একে তো অনেক দূর থেকে এসেছি। এখন যদি থাকার জায়গা না পাই তাহলে তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে। মেইন শহর থেকে কিছুটা দূরে রোডের পাশের একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে বসলাম আমরা চারজন মিলে। সবার মাথায় অনেক চিন্তা ভর করে আছে। একেতো থাকার জায়গা জোগাড় হয়নি তার উপর বিকেল হয়ে সন্ধ্যা হবে একটু বাদেই। তারপর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।
.
আমি দোকানিকে চার কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে এপাশ ওপাশ তাকাতে লাগলাম। শহরের থেকে এদিকটাই বেশ লাগছে। অনেক নিরিবিলি একটা জায়গায় দোকানটা। ফুরফুরে আবহাওয়া।
--চিন্তা করিস না খালিদ। একটা না একটা ব্যবস্থা হবেই। কথাটা বললো রিমি।
আমি ওর কথায় কান দিলাম না।চুপ করেই বসে রইলাম।
এবার আসাদ বললো..
--আরে এতো টেনশন করছিস কেনো। রাত হতে এখনো অনেক দেরী আছে।
আমি রাহাতের দিকে তাকালাম। ছোট ছেলেটা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। মনে মনে হয়তো ভাবছে, কোন কারণে যে আমার সাথে আসলো।
.
আমি দূর থেকে লক্ষ করলাম চা ওয়ালা আমাদের কথা গুলো শুনার চেষ্টা করছে। বার বার পিছনে তাকাচ্ছে চা বানানোর সময়। একটু পরেই তিনি চা নিয়ে আমাদের সামনে রেখে দিলেন। আমরা চা নিয়ে চুমুক দিতে লাগলাম। কিন্তু দোকানি আমাদের পাশে ঠায় দাড়িয়ে রইলেন। আমি একটু অসস্তিতে পড়ে গেলাম। লোকটাকে লক্ষ করলাম। আধাবয়স্ক একটা লোক। জিজ্ঞেস করলাম ..
--মামা কি সমস্যা? এভাবে তাকিয়ে থাকলে খাই কি করে?
--না মানে মামা, আসলে আমি আপনাদের কথাগুলো শুনছিলাম। মনে হলো আপনারা বিপদে পড়েছেন।
--হুম আসলে থাকার জায়গা খুজে পাচ্ছি না। সব হোটেল বুকড।
--আসলে আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?
এবার আসাদ বলে উঠলো ..
--উত্তর দিক থেকে।
এই ছেলের মাথা গেছে মনে হচ্ছে টেনশনে। দোকানি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..
--উত্তর দিক থেকে মানে বুঝলাম না মামা।
আমি পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বললাম..
--না মামা, আসলে ও বলতে চাইছে আমরা রংপুর থেকে এসেছি।
--ওহ তারমানে আপনারা ঘুরতে আসছেন। কিন্তু এই মৌসুমে হোটেল গুলো তো খালি থাকেনা। পর্যটকদের প্রচুর ভীড়।
--হুম মামা সেটাই তো দেখছি।
--তবে মামা আমি আপনাদের একটা থাকার জায়গার সন্ধান দিতে পারি।
লোকটার মুখে এমন কথা শুনে সবাই উনার দিকে আগ্রহের দৃষ্টি তে তাকালাম। লোকটা আবার বললো ..
--কিছুদূর এগিয়ে একটা বড় ধরনের বাড়ি দেখতে পারবেন। শরীফুদ্দিন সাহেবের বাড়ি।উনি একজন ব্যবসায়ী। উনার একটা রেস্টহাউস আছে।। আপনারা উনার বাসায় গিয়ে দেখতে পারেন। একটা ব্যবস্থা হয়ে যেতেও পারে। কপাল ভালো হলে ফ্রিতে সার্ভিস পাবেন। তবে একটা প্রবলেম আছে।
--কি প্রবলেম? জিজ্ঞেস করলো আসাদ।
--আসলে উনি যাকে তাকে থাকতে দেন না।মাথায় সম্ভবত প্রবলেম আছে উনার। উনার মন জয় করতে পারলেই থাকতে দিতেও পারে।
এরপর আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে বললেন তিনি।
রাহাত বলে উঠলো ..
--তাহলে আর দেরী কেনো ভাইয়া? জলদি চল শরিফুদ্দিন এর বাড়ি।
--হ্যাঁ হ্যাঁ তাই চল সবাই।
চায়ের বিল দিতে গিয়ে দেখি মামায় আমতা আমতা করতেছে .. বলছে
--মামাদের কতো উপকার করলাম..
বুঝলাম এই লোক বকশিশ এর আশায় আছে। আজকাল ফ্রিতে কেউ কারো উপকার করে না। যাই হোক বকশিশ মিটিয়ে চলতে লাগলাম দোকানির বলা পথের দিকে। সন্ধ্যেও প্রায় হয়ে এসেছে।
.
____চলবে____
0 Comments
please Wait