--লেখকঃ Khalid Hasan---
--------প্রথম পর্ব --------
.দাদুর মারা যাওয়ার পর তার রুমটা অনেকদিন যাবৎ তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া আমিও একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা থেকে আসার পর বেশ কদিন থেকে বিশ্রাম এ আছি। তবে এখন মনে হচ্ছে বিশ্রাম এর সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমার মতো ছেলেদের বসে থাকতে নেই। সবসময় রহস্যের পিছনে ছুটাই তো আমার কাজ। তাই রহস্য নিয়ে শুরু করার আগে দাদুর ঘরে একটু চোখ বুলাতে হবে।
.
মায়ের কাছে দাদুর ঘরের চাবি নিলাম। তারপর দাদুর ঘরে তালা খুলে প্রবেশ করলাম। অনেকদিন ধরে পরিষ্কার না করায় ধূলো জমে গেছে ঘরের আসবাবপত্র গুলোতে। দাদুর কম্পিউটার টা চোখে পড়লো। অনেক পুরনো একটা জিনিস। দাদুর মতোই এই জিনিসটারও অনেক বয়স হয়েছে। যেকোন সময় পরপারে যেতে পারে। যাই হোক কম্পিউটার অন করে বসে পড়লাম ঘাটাঘাটিতে। এতেই চোখে পড়লো দাদুর শেষ মিশন সমন্ধে একটা ইমেইল। এমএমএফ থেকে এসেছে। প্রায় এক বছর আগের ইমেইল। সম্ভবত মিশনটা আন সাকসেসফুল রয়ে গেছে। ইমেইল টা খুলে পড়তে শুরু করলাম। ইংরেজি তে অনেক কিছুই লেখা ছিলো। যার সারমর্ম এমন।
.
বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের একটা প্রত্যন্ত এলাকার জঙ্গলে প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক কিছু ঘটে চলেছে। বিষয় টা অনেকটা ভৌতিক। তবে আজ পর্যন্ত রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। কি ঘটে চলেছে সেই জঙ্গলে! বিষয়টা উদ্ঘাটন করাই হলো মিশন। ইমেইলে একটা ছবিও দেয়া হয়েছে। ছবিটা একটা জঙ্গলের। সম্ভবত এটাই সেই জঙ্গলের ছবি। সাথে জঙ্গলের লোকেশান দেয়া হয়েছে।ইমেইল টা অনেক শর্ট। মূলত ইমেইলে রহস্য সমন্ধে বিস্তারিত কিছুই নেই। শুধু ওই জায়গায় রহস্য রয়েছে এটুকু জানিয়ে দিয়েই শেষ।
.
ইমেইল টা দেখা শেষ করে ভাবতে লাগলাম। দাদুর আন সাক্সেস মিশন দিয়েই শুরু করা যাক। আমি ইমেইলের ভিতরে থাকা জঙ্গলের ছবি টা আমার ফোনের মধ্যে নিয়ে রাখলাম। পরে কাজে লাগবে। যেহেতু এই জঙ্গলটাই আমার মিশন।
.
এখন এডভেঞ্চার করার জন্য একটা মানসিক প্রস্তুতি নেয়া দরকার। অনেকদিন এডভেঞ্চার এ যাওয়া হয়না। তবে এবারে যাচ্ছি ভিন্নভাবে। একটা মিশন রয়েছে যেটা আমাকে সাকসেস করতেই হবে। রহস্যের সাথে পাঞ্জা লড়ে দিন পার করা নয়, রহস্য ভেদ করাই এখন উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। তবে এডভেঞ্চার এ তো একা যাওয়া যাচ্ছে না। সাথে কয়েকজন সঙ্গি থাকলে পারফেক্ট হবে। রিস্ক কমে যাবে। আর একসাথে এডভেঞ্চার এর রোমাঞ্চকর মূহুর্ত গুলো উপভোগ করা যাবে। ভাবতে লাগলাম কাকে কাকে নেয়া যায় এই মিশনের জন্য ..অবস্যই যারা যারা এডভেঞ্চার করার জন্য উত্সুক হয়ে থাকে সবসময় ,তাদেরকেই নিতে হবে।
.
ভাবাভাবি পড়ে হবে। কম্পিউটার টা অফ করে দাদুর রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। কাকে কাকে সাথে নিয়ে যাবো এ নিয়ে ভাবতে হবে। খুব কাছের লোক ছাড়া কাউকে নেয়া যাবেনা। তাছাড়া অনেকদূরের পথ যেতে হবে খরচাপাতি নিয়ে ভাবতে হবে। যাই হোক রাতের মধ্যেই একটা কিছু বের করে ফেলতে হবে।
.
রাতে খাওয়া শেষে বন্ধু আসাদকে ফোন দিলাম..
--হ্যালো আসাদ
--হ্যাঁ বন্ধু বল। তোর তো কোনও খোঁজ পাওয়া যায়না আজকাল। কেমন আছিস?
--ভালো। তোর কি খবর?
--এইতো চলছে। চাকরি থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়েছি। ভাবছি কোথাও থেকে ঘুরে আসবো।
আমি আসাদের কথা শুনে খুশিতে নাচবো এমন ভাব। তারপরও খুশিটা চেপে রাখলাম।
--হ্যাঁ রে আমিও তাই ভাবছি। কবে যাবি বল?
--তোর যখন ইচ্ছা তখনই। আর কে কে যাবে আমাদের সাথে?
--এখনো কাউকে বলিনি। তবে লোকসংখ্যা কম হলেই ভালো হয়।
--তাহলে এক কাজ করা যাক।আমি রিমিকে ফোন দিয়ে জানাচ্ছি। তুই আরেক জনকে নিয়ে নে। চারজন হলেই ভালো হয়।
..রিমির কথা মনে হতেই আমার মাথা গরম হয়ে গেলো। বোরিং একটা মেয়ে। আমাদের বান্ধবী। একসাথে কলেজে পড়তাম। কিন্তু একটু বেশিই স্মার্ট সে। আমার খুব বেশি স্মার্ট মেয়েদের ভালো লাগেনা। এদের স্মার্টনেস বেশি থাকলেও মাথায় বুদ্ধির পরিমাণ খুবই অল্প। তাছাড়া এই মেয়েটা আমাকে বিরক্ত করতে সদা প্রস্তুত থাকে।সবাই ওকে স্মার্ট ভাবলেও আমি ওকে একটা গাধী মনে করি।তবে অনেকদিন থেকে দেখা হয়না ওর সাথে। আসাদকে বল্লাম ..
--দোস্ত এই মেয়েটাকে আমাদের সাথে না নিলে হয়না?
--আরে দোস্ত ঘুরতে যাচ্ছি আর ঘনিষ্ট বান্ধবীকে সাথে নিবোনা! তাছাড়া কতদিন একসাথে কোথাও যাওয়া হয়না। যে যার মতো ব্যস্ত।আগে কতো ঘুরতে যেতাম সবাই একসাথে।
আসাদের কথা শুনে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। আসাদ আমাকে ইমোশনাল করে দিলো। ভেবে দেখলাম মেয়েটাকে সাথে নিলে মন্দ হয়না। তাছাড়া অনেক দিন বাদে একটা ট্রিপে যাচ্ছি।
--আচ্ছা ঠিকআছে তুই ওকে ফোন দিয়ে ডেকে নে। তারপর আগামীকাল একসাথে তোরা আমাদের বাসায় চলে আসিস। তারপর সবাই একসাথে রওনা দিবো।
--ওকে বন্ধু।
ফোন রেখে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম দরজায় রাহাত দাড়িয়ে। আমার চাচাতো ভাই। সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
--ভাইয়া, কোথাও যাওয়ার প্লান করছিস নাকি? খুশিতে আটখানা হয়ে জিজ্ঞেস করলো রাহাত ..
--হুম। তো?
--আমিও যাবো।
--তুই গিয়ে কি করবি?
--কি করবো মানে!আমিও তোদের সাথে ঘুরতে যাবো। পরীক্ষা শেষ আমার এখন তো আর পড়াশোনা নেই। একদম ফ্রী। আর এই ফাকে ঘুরতে যাওয়ার চান্স টা কি মিস করা যায় নাকি?
এই ছেলে তো মহা মুশকিল। এই উগান্ডাবাসীদের আমার সাথে নিয়ে গেলে আমার মিশনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে এ ব্যপারে আমি কনফার্ম। কিন্তু একে সাথে না নিলে আমাকেও যেতে দিবেনা।এর আবার খুব জেদ। মহা মুশকিল। ঠোঁটে জোর করে একটা মুচকি হাসি নিয়ে বল্লাম ..
--তুইও যাবি সোনাভাই! ঠিকআছে কাল সকালে আসিস। এখন গিয়ে চাচীজানের পার্মিশন নে।
রাহাত আহ্লাদে আটখানা হয়ে চাচীর পার্মিশন নিতে গেলো। হায়রে আমার মিশন। আমি মাথায় হাত দিয়ে জঙ্গলের ছবিটা দেখতে লাগলাম ফোনের স্ক্রিনে।
.
.
_____চলবে _____
.
গল্পটা ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের পড়তে বলিয়েন। নেক্সট পার্ট আসছে।
0 Comments
please Wait