---মিরাকল মিশন : ফরেস্ট মিসট্রি---


--লেখকঃ Khalid Hasan ---

--------তৃতীয় পর্ব --------

.

কিছুক্ষণ পর দোকানির ভাস্য অনুযায়ী একটা বাড়ি পেয়ে গেলাম। বিরাট বড় আলিশান বাড়ি। মাগরিবের আযান একটু আগেই দিয়েছে। একটা অন্ধকার ভাব চলে এসেছে। বাড়িটার গেইট ডিঙ্গিয়ে ঢুকলাম। গেইটে কোনো গেইটম্যান নেই। লোকটা মনে হয় খরচ বাচানোর চেস্টা করছে। আমরা বাড়িটার সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল এ চাপ দিলাম। কিছুক্ষণ পর গেইট খুলে দিলো এক জোকার টাইপের লোক।জোকার বললাম এই কারণে, লোকটা রাতের বেলাতেও একটা কালা চশমা পড়ে আছে। মনে হয় ভিতরে এতক্ষণ কালা চশমা পড়ে কালা চশমা গানটার তালে তালে ডান্স দিচ্ছিলো। লোকটা এসেই আমাদের সামনে দাড়ালো তবে দরজায় হেলান দিয়ে। মনে হচ্ছে শরীরে বল পাচ্ছে না দাড়ানোর। হঠাৎ রিমি তার নাক চেপে ধরলো। আমিও একটা গন্ধ পেলাম নাকে। লোকটা নিশ্চয়ই ড্রিঙ্ক করেছে। রিমি আমাকে কনুই দিয়ে খোচা মেরে বললো ...
--এখান থেকে চল। একদম বাজে পরিবেশ।
--এখানেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া উপায় নেই। তুই চুপ করে দাড়িয়ে থাক।
এইবার আমাদের দিকে তাকিয়ে লোকটা বলে উঠলো ..
--তোমরা কলিং বেল চেপে কি বিরবির করছো? গল্প করার ইচ্ছা হলে নিজেদের বাসায় গিয়ে করোনা? এখানে এসেছো কেনো? যত্তসব! বলেই দরজা লাগাতে যাবে এমন সময় আসাদ বলে উঠলো ..
--আরে কাকু দাড়ান দাড়ান। আসলে আমরা শরিফুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে এসেছি। উনাকে ভিতরে গিয়ে একটু ডেকে দিননা প্লিজ।
.লোকটা এইবারে ধমক দিয়ে বললো..
--আমাকে দেখে কি তোমাদের জোকার মনে হচ্ছে নাকি হুম?
--এক্সজ্যাক্টলি
কথাটি বলে রিমি লোকটার রাগের মাত্রা দীগুন করে দিয়েছে। এই মেয়েকে বললাম চুপ করে থাকতে।
--এই মেয়ে তুমি জানো আমি কে?
--কে আপনি? এই বাড়িতে কাজ করেন নিশ্চয়ই?
--হোয়াই ডু ইউ মিন! আমি এই বাড়ির মালিক। আর অত্র এলাকার নামকরা ধনী ব্যাক্তি জনাব শরিফুদ্দিন।
অনেক গর্বের সহিত বললো কথাটা। কিন্তু কথা শুনে তো আমাদের অবস্তা বেহাল। উনি তো আমাদের উপর ক্ষেপে গেছেন। এরপরও থাকতে দিলে তো। আমি রিমিকে বললাম ..
--দিলিতো গন্ডগোল পাকিয়ে। চুপ করে থাকতে বললাম না? এখন চুপ থাক। লোকটার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললাম।
--আসলে আঙ্কেল ও আপনাকে চিনতে পারেনি তো তাই। কিছু মনে করবেন না। আমি তো আপনাকে চিনতে পেরেছি। অত্র এলাকায় আপনার কতো নামডাক শুনেছি। এছাড়াও আপনি একজন দয়ালু ব্যক্তি। তাছাড়া বিপদে কতো লোককে সাহায্য করেন।আপনার মতো মানুষ আর কজনই বা আছে।
এইভাবে কিছুক্ষণ তেল মারার পর দেখলাম লোকটা নরম হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে নিজেকে নিয়ে গর্বের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি লোকটার ভাবনার জগত থেকে ডাক দিয়ে বললাম।
--আঙ্কেল আপনার সাথে আমাদের কিছু জরুরি কথা আছে।
--হ্যাঁ অবশ্যই। চলো ভিতরে চলো। তবে আর একটা কথা।
--কি কথা আঙ্কেল?
--ডোন্ট কল মি আঙ্কেল। কল মি শারিফ। আবারো একটা গর্ব নিয়ে বললো।
--কেনো কেনো?
--আমার বিদেশী বন্ধুরা তো আমাকে শারিফ বলেই ডাকে। সুন্দর না? আর আমাকে দেখে কি তোমার আঙ্কেলের মতো লাগে? আমি তো তোমাদের মতোই ইয়াংম্যান। হা হা।
--ওহ তাইতো! আপনি তো আসলেই ইয়াং আছেন এখনো। চুলগুলো কলব করলে একদম আমার বয়সী হয়ে যাবেন।
লোকটা এইবার মাথায় হাত দিলো। মনে হচ্ছে চুল কলব করতে ভুলে গেছে তাই আফসোস হচ্ছে।
--তোমরা ভিতরে আসো।
.
আমরা সবাই ভিতরে গিয়ে বসলাম। শরীফ সাহেবের মদের ডিব্বা এখনো টেবিল এর উপরে। তিনি সেগুলো সরিয়ে রাখলেন। এরপর আমাদের সাথে সোফায় বসলেন।
এরপর সবাই উনার সাথে পরিচিত হলাম।
আসাদ জিজ্ঞেস করলো..
--শারিফ সাহেব (একটু ব্যঙ্গ করে) আপনার এতো বড় বাড়ি অথচ কোনো দাড়োয়ান রাখেননি কেনো?
--ধুর, এগুলো হলো উটকো ঝামেলা। আমি ত ড্রাইভারও রাখিনা নিজেই ড্রাইভিং করি।
আসাদ বিরবির করে বললো সালা হার কৃপণ। কথাটা ভদ্রলোকের কান অবধি পৌছালো না।
--আচ্ছা তাহলে এইবার বলো তোমরা কি উদ্দেশ্যে আমার কাছে এসেছো?
আসাদ আমাদের সমস্যার সব কথা খুলে বললো। উনি সবকিছু শুনে চিৎকার করে বললো
--এই উদ্দেশ্যে আমার কাছে এসেছো! দূর হও।
লোকটার মাথায় সমস্যা আছে নাকি! আমি শান্ত গলায় বললাম
--আপনার যত টাকায় ভাড়া দিবেন আমরা তত টাকাই দিতে রাজি আছি।
--এই এই এই মিস্টার ... টাকার গরম দেকাচ্ছো? বেটা এইবার তেলে বেগুনে জলে গেছে দেখলাম।একটা ওয়ার্ড তিনবার করে বলা শুরু করেছে। আমরা সবাই হু হুতাশ করছি। এইখানে জায়গা না পেলে রাস্তাতেই থাকতে হবে আজ।
--অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আসলে থাকতে দিতাম।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
--কিরকম উদ্দেশ্য?
--ভিন্ন রকমের উদ্দেশ্য আরকি।
আমি এবার পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে বললাম।
--আমার একটা ভিন্ন রকমের উদ্দেশ্য আছে।
জঙ্গলের ফটোটা বের করে উনার সামনে নিয়ে বললাম
--এটাই আমার উদ্দেশ্য।
.
লোকটা এইবারে অবাক হয়ে গেলো। অবশ্য বাকিরা এখনো ফটোটা দেখেনি। ওরা কিছু বুঝলো না ব্যপারটা। শরিফ সাহেব আমার কাধেঁ চাপর মেরে বললো ...
--এরকম একটা উদ্দেশ্য ছিলো আগে বললেই পারতে। যাইহোক তোমাদের থাকার ব্যবস্থা করছি। তাহলে তোমরা যতদিন খুশি থাকতে পারছো। তবে আমার এখানে রান্নার লোক নেই তোমাদের নিজেদেরকেই রান্না করে খেতে হবে। তাহলে সবকিছু ঠিক আছে তো?
.
রিমি একটা হাসি দিয়ে বললো...
--সব ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু আপনি এই রাতের বেলাতেও একটা কালো চশমা কেনো পড়ে আছেন সেটাই বুঝছি না।
লোকটা এবারে আবারো রেগে গেছেন। এক মনে তাকিয়ে আছেন রিমির দিকে। রিমিকে খেয়ে ফেলবে নাকিরে বাবা!
হঠাৎ শারিফ সাহেব তার চোখ থেকে চশমাটা খুলে ফেললেন। চশমা খুলার সাথে সাথে চারজনের সবাই কেপে উঠলাম।রিমি চিতকার দিয়ে উঠলো। পাশের সোফায় রিমির অজ্ঞান হওয়া দেহটা লুটিয়ে পড়লো। শরিফুদ্দিনের একটা চোখের কিছুই নেই। শুধু গর্তটাই আছে। কি বিশ্রী। কিন্তু অন্য চোখটা দেখতে অসাধারণ ছিলো। কিন্তু ব্যপারটা রিমি সহ্য করতে পারেনি তাই দেখেই চিতকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। আসাদ আর রাহাতের অবস্থাও বেহাল। থরথর করে কাপছে। তবে এই পরিস্থিতিতে আমি নিজেকে সামাল দিতে লাগলাম।
--শারিফ সাহেব আপনি চশমাটা পড়ে ফেলুন। আপনি জানেন এই চশমাটা পড়লে আপনাকে শাহরুখ খানের মতো লাগে। জলদি পড়ুন। আমি আপনার একটা ছবি তুলে দিচ্ছি।
.
শরিফ সাহেব মাথা নিচু করে একটা লজ্জাভাব নিলো। নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হেসে বললো..
--ওহ থ্যাঙ্কস ইয়াংম্যান। তুমি খুবই সুন্দর কথা বলো। সুন্দরের কদর করতে জানো। তোমার বাকি বন্ধুগুলো তা বুঝলো না।
লোকটা তার চশমা পড়লো। বাপরে কি ভয়ঙ্কর চোখ। আগে জানলে কখনো চশমা খোলার কথা বলতো না রিমি। শরিফুদ্দিনের চশমা পরিহিত কয়টা ছবি তুল্লাম। তিনি তো বেজায় খুশি। বিভিন্ন এঙ্গেলে পোস দিলেন। যাকে বলে শৈল্পিক স্টাইল আরকি। এরপর তিনি আমার হাতে রেস্টহাউস এর চাবি দিলেন। আর বললেন ..
--তোমার চিন্তাভাবনা ভালো লাগলো। সবাই যখন আমার খারাপ চোখটা দেখে ভয় পাচ্ছিলো তখন তুমি আমার ভালো চোখটা পর্যবেক্ষণ করছিলে।
.
এরপর রিমিকে কাধেঁ তুলে নিলাম। এই বেচারিকে আবার জ্ঞান ফিরানোর কাজ বাকি আছে। রেস্টহাউস এ ঢুকলাম সবাই।কিছুটা দুরেই এটার অবস্তান। বেশ পরিপাটি রুম। রিমিকে একটা বেডে শুইয়ে দিলাম আর রাহাতকে পানি নিয়ে আসতে বললাম। আসাদকে বেশ কয়েকটা শুনিয়ে দিলাম রিমিকে নিয়ে আসার জন্য। মেয়ে মানেই যেনো এক্সট্রা আপদ। এরা খালি একের পর এক ঝামেলা তৈরি করতে জানে। আমার মিশনটাই মাটি করে দিবে এই মেয়ে।
.
এরপর রিমির জ্ঞান ফেরার পর সবাই শুকনো খাবার খেয়ে নিলাম। যেহেতু বাসা পেতেই অনেক রাত হয়ে গেছে তাই আর বাইরে গিয়ে খেয়ে আসা হলো না।কাল থেকে অবশ্য রান্নার ব্যবস্থা করা হবে। আজকে রাতটা পার করতে পারলেই হয়। ঘুমানোর সময় আরেক বিপত্তি। রিমি মেয়ে বলে ওকে একটা রুমে পাঠিয়ে দিলাম। আর আমরা একটা রুমে শিফট হলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই মেয়ে আমাদের রুমে এসে গেলো ...
--কিরে এইখানে কি আবার। যা ঘুমা।
--খালিদ তুই আমার রুমে আয় আমার একা একা খুব ভয় করছে।
--বাসায় থাকিস কার সাথে?
--আম্মুর সাথে।
--বড় হইছোস না তুই! এখন একা থাকা শিখ। যা কইছি। ধমক দিয়ে বললাম আমি। কিন্তু রিমির চলে যাওয়ার নাম নাই। আসাদ বললো ..
--আরে যা না ভাই। মেয়েটা একা একা ভয় পাচ্ছে তো?
আমি আসাদকে ধমক দিয়ে বললাম ..
--হারামি মজা নিচ্ছিস?
এরপর রিমিকে বললাম ..
শারিফ সাহেবের খোলা চোখ দেখার এতো শখ হইছিলো কেনো? এখন যা একা একা ঘুমা গিয়া।
মেয়ের যাওয়ার নাম নাই। আসাদের উপর রাগ আমার চির চির করে বারতেছে। আপদটারে এই বেটার জন্যই নিয়ে আসছি।
রিমি এইবার মিনতি করে বলতে লাগলো ...
--খালিদ, প্লিজ বিশ্বাস করে আমার সাথে আমার রুমে চল।আমি কথা দিচ্ছি রাতের আধারে তোর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলবো না। সেইরকম কাপুরুষিনি আমি নই। তোর কিচ্ছু হবেনা চল।
মেয়ের কথা শুনে আমার চোখ উল্টায়া গেলো। মাথা চুলকাতে চুলকাতে মনে করার চেষ্টা করলাম এইটা সম্ভবত 2017 সাল। অগত্যা মেয়ের পেছন পেছন গেলাম। তবে মেয়েকে বিছানায় শুতে দিয়ে আমি সোফায় শুয়ে পড়লাম। কেননা এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই।কথার ধরন দেখেই বুঝা যাচ্ছে যেকোন সময় ইজ্জতের উপর হামলা করতে পারে। দিনটা পার করে তখন রাত পার করতে ব্যস্ত আমরা।
.
____চলবে____
Reactions

Post a Comment

0 Comments