------মিরাকল মিশন ------ ৩য় পর্ব


---লেখকঃ Khalid Hasan---

--------তৃতীয় পর্ব ------



সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে বাবা হঠাৎ বলে উঠলেন ..
--খালিদ, আমার মনে হয় তুমি এখনো মানসিক অসুস্থতায় ভুগছো .. এক কাজ করতে পারো। কদিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসো। এই অবস্থায় বাসায় না থাকাই ভালো। তোমার কষ্ট টা আমি বুঝি। কষ্ট আমাদের ও কম হচ্ছে না। তবে ভেংগে পড়লে তো চলবে না বাবা। কদিন বাইরে থেকে ঘুরে আসো। মনটা রিফ্রেশ হবে। পারলে আজকেই যেতে পারো। তোমার যেখানে যাওয়ার ইচ্ছা হয় ঘুরে এসো।
..আমিতো বাবার কথা শুনে আনন্দে নাচবো ভাবছি। এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। যাইহোক আমি বাবাকে সম্মতি দিলাম ঘুরতে যাওয়ার। তবে আমি বলে দিলাম আমি একাই যাবো। বাবাও আর না করে নি।
..
বিকালের মধ্যেই আমার ব্যাগ গুছানোর কাজ শেষ করে দিয়েছে আম্মু। আমি ম্যাক্স এর দেয়া গোপণ ডিভাইস গুলো লুকিয়ে ব্যাগে পুরে দিলাম। রাতের দিকে বেরোলেই ভালো হবে। তবে মনের মধ্যে একটু ভয়ও হচ্ছে। কেননা একটা অপরিচিত লোকের সাথে আমি কোথায় যাচ্ছি তা আমি নিজেও জানি না। সেখানে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে কে জানে। আর তার পরিণতি টাই বা কি হবে সেটাও ভাব্বার বিষয়। তবে যাই হোক, অজানাকে জানাই তো আমার নেশা। তাই আমাকে যেতেই হবে।
.
বাসা থেকে বের হলাম রাত আটটার দিকে। বাবা অবশ্য আমাকে এগিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি নিষেধ করলাম। কেননা সবকিছুই গোপণ রাখতে হবে। কেউ জেনে গেলে চলবে না।
.
চলছি গোরস্তান এর দিকে। কাধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিয়েছি। পকেট থেকে ঘড়িটা বের করে হাতে পড়লাম। গোরস্তান এ পৌছাতে লাগবে দশ মিনিট। ম্যাক্স বলেছিলো তার সিগন্যাল পাওয়ার পর এখানে পৌছাতে আধা ঘন্টা সময় লাগবে। তাহলে এখনই সিগন্যাল পাঠানো উচিত। আমি ঘড়িটার সাইডের বড় বাটনে চাপ দিলাম। ঘড়িটা বিপ বিপ শুরু করলো। সম্ভবত সিগন্যাল যাচ্ছে। রাস্তাঘাট একদম ফাকা। আমি গোরস্তানে দশ মিনিটে পৌছালাম। ঘড়িতে সময় দেখে নিলাম আরো বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। দাদুর কবরের পাশে একটু বসলাম।মনে মনে ভাবতে লাগলাম ...দাদু হয়তো এটাই চেয়েছেন।
.
কিছুক্ষণ পর আকাশে দেখলাম একটা কিছু আসছে। চারদিকে বাতাসের উপস্থিতি দেখা গেলো।। ম্যাক্স এর স্পেস সিফট আমার সামনে এসে থেমে গেলো। ভিতর থেকে ম্যাক্স বেড়িয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে..
--হ্যালো ইয়াংম্যান। সবকিছু ঠিক আছে তো।
--এভরিথিং ইজ ওকে। চলো যাওয়া যাক।
..এরপর দুজনে ভিতরে গিয়ে বসলাম। আমি স্পেস সিফটের ভিতরটা লক্ষ্য করতে লাগলাম। অন্যরকম লাগে। বসার জন্য চারজনের জায়গা। আমি আমার গোপণ ডিভাইস গুলো ব্যাগ থেকে বের করে সেট করতে লাগলাম। কানের ইয়ারপিস টা একদম রিয়েলিটি সাউন্ড দেয়। অসাধারণ। শব্দ করে স্পেশ শিফট উপরে উঠতে লাগলো ...
--দেখো খালিদ তুমি এক অন্যরকম জায়গায় যাচ্ছো। তোমার মনোবল আর চিন্তাশক্তির জাগ্রত কর। তোমার দাদুর মতো সাহসী হও। আর আমাদের যেতে সময় লাগবে আধা ঘন্টা। আমরা মহাসাগরের একটা অজানা দীপে যাচ্ছি। যেটা অত্যন্ত গোপণ একটা দীপ। ওই দীপের অবস্থান শুধু এমএমএফ এর এজেন্ট রা জানে।
--এমএমএফ! কি সেটা?
--এমএমএফ (mmf) অর্থাৎ মিরাকল মিশন ফোর্স। এটা একটা গোপণ সংস্থা। গেলেই বুঝতে পারবে।
..আমরা কিছুক্ষণ পর ল্যান্ড করলাম। কত দূরের পথ এত জলদি এসে গেলাম ভাবতেই অবাক লাগছে। আমি আর ম্যাক্স নেমে গেলাম। নেমেই আমি অবাক হলাম। একটা বিশাল এলাকা জুরে একটাই ভবন। ম্যাক্স আমাকে সেই ভবনের মেইন গেইটের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।গেইটে বড় করে লেখা। মিরাকল মিশন ফোর্স। ইংরেজি তেই লেখা। আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম। সবাই ম্যাক্স কে দেখে হাই হ্যালো বলতে লাগলো। আমাকে সবাই একটু ভিন্ন নজরে তাকাচ্ছে লক্ষ করলাম সেটা। তবে আমলে নিলাম না। এরপর ম্যাক্স আমাকে একটা বড় কক্ষে নিয়ে গেলো ..
--এটা হচ্ছে আমাদের অস্ত্র পরীক্ষাগার। এখানে অস্ত্র তৈরি করা হয়। এবং সেগুলোর পরীক্ষা চলে।
আমি চমকের সাথে সব দেখতে লাগলাম। সব দেখার পর ম্যাক্স আমাকে আর একটা বড় কক্ষে নিয়ে গেলো ..
--দেখো খালিদ এটা হচ্ছে আরেকটা গবেষণাগার। মূলত এখানে উন্নত ডিভাইস গুলো তৈরি করা হয়। তোমার শরীরে যে ডিভাইস গুলো আছে সেগুলো এখানেই উদ্ভাবন করা হয়েছিলো।
..আমি অবাক চোখে সব দেখতে লাগলাম। সেখানে অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত। সবাই যার যার কাজ মন দিয়ে করছে।
..
হটাৎ বাইরে থেকে কেউ একজন এসে ম্যাক্স কে কি যেনো বললো।বলে চলে গেলো। ম্যাক্স আমাকে বললো ..
--চলো খালিদ তোমার সাথে একজনের সাক্ষাৎ করতে হবে।
ম্যাক্স আর আমি একটা ছোট কক্ষে প্রবেশ করলাম। অফিসের মতোই মনে হলো। সেখানে কেউ একজন আমাদের জন্য অপেক্ষারত ছিলো। দেখতে বৃদ্ধ মনে হচ্ছে। বয়স ষাট এর মতো হবে। চুল দাড়িতে পাক ধরেছে। তিনি আমাদের বসতে বললেন। তার কানেও একইরকম ডিভাইস দেখতে পেলাম। তিনিই প্রথম আমাকে বলতে শুরু করলেন ...
--তাহলে তোমার নামই খালিদ।আমি প্রফেসর স্টিফেন।এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট। তোমার দাদু মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে আমাকে একটা মেইল করেছিলো। সেখানেই তোমার ব্যাপারে সব বলেছে। তুমি কি জানো তোমার দাদু কে ছিলেন?
আমি জিজ্ঞেস করলাম.. কে ছিলেন?
--তোমার দাদু আমাদের এই সংস্থার একজন এজেন্ট ছিলেন। আমাদের এই সংস্থাটি একদমই গোপন। আমাদের সাথে কোনো সরকারি যোগসূত্র নেই। তবে আমাদের কাজ হচ্ছে পৃথিবীর অলৌকিক বিষয়গুলোর কারণ জানা এবং তা সমাধান করা। আর তা করতে হবে গোপনীয়তা রক্ষা করে। যেসব বিষয় মানুষ জানেনা অর্থাৎ ভুতুড়ে ব্যপার গুলো যাকে বলে সেগুলো নিয়েই আমাদের কাজ। অলৌকিক আর রহস্যময় বিষয়গুলোর সমাধান করাই আমাদের অর্থাৎ এমএমএফ এর কাজ। তোমার দাদু চেয়েছেন তুমি এই সংস্থার একজন এজেন্ট হও। আমি মনে করি তুমি পারবে। আজানাকে জানতে কজনই বা পারে। আমরা মানব সমাজ তো জন্মের পরেই ক্যারিয়ার গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কজন মানুষ আছে যে অজানাকে জানতে চায়? তবে তোমার মধ্যে সেই গুণটা আছে বলেই তোমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।
..
আমি জিজ্ঞেস করলাম ..
--আমি কি তাহলে এই সংস্থার এজেন্ট হতে চলেছি?
--হ্যাঁ তবে এতোটা সহজে নয়। প্রস্তুতি দরকার পরীক্ষা দরকার। এমনকি মৃত্যুকে উপলব্ধি করা দরকার।
--অলৌকিক আর রহস্য নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ভূত বলতে কি কিছু আছে?
প্রফেসর একটু হাসলেন...
--ঠাকুরমার ঝুলি তো অনেক দেখা হয়েছে এবার দেখে আসো সত্যিকারের ভূতেদের।
..প্রফেসরের কথার কিছুই বুঝলাম না আমি।
..আমি লক্ষ্য করলাম প্রফেসর আমার দিকে ক্রুর হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। লোকটা এভাবে হাসছে কেনো? কোনো কুমতলব আটছে নাতো। পাশে ফিরে তাকাতেই দেখলাম ম্যাক্স ও একই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকগুলো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো! মেরে ফেলতে চায় নাকি আমায়!
.
হঠাৎ ম্যাক্স হিংস্র পশুর মতো একটা ইঞ্জেকশন এর সিরিন্জ বের করে আমার ঘাড়ে সোজোরে সুচ টা ঢুকিয়ে দিলো। এতো তাড়াতাড়ি করে ফেললো কাজটা যে আমি কিছুই করতে পারলাম না। কুকিয়ে উঠলাম আমি। তারপর একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
.
------চলবে -----
Reactions

Post a Comment

0 Comments