------মিরাকল মিশন ------ ৪র্থ পর্ব


---লেখকঃ Khalid Hasan---

--------চতুর্থ পর্ব ------



যখন সংজ্ঞা ফিরে পেলাম তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম গাঢ় অন্ধকারে। মনে করার চেষ্টা করলাম আমার সাথে কি ঘটেছিলো। ম্যাক্স আর প্রফেসর কি আমার সাথে কোনো বিশ্বাস ঘাতকতা করলো! আমাকে অজ্ঞান করার আগে প্রফেসর বলেছিলেন সত্যিকারের ভূতের কথা। কথাটা মনে পড়তেই কেমন একটা ভয় এসে ভর করলো মনের ভিতর। আমি উঠে বসলাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। চোখে পড়লো গাছপালা ঘেরা একটা জায়গা। মাটিতে হাত দিয়ে দেখলাম মাটি ভিজে আছে। একটা স্যাতস্যাতে জায়গায় বসে আছি আমি। সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছিলো। আমার কাপড় চোপড় গুলো ভিজে গেছে। চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু জঙ্গলই চোখে পড়ছে। কানে হাত দিয়ে দেখলাম ইয়ারপিসটা এখনো কানেই লাগানো আছে। উঠে দাড়ালাম। এই অন্ধকারে ঘন জঙ্গলে কে আমাকে কখন রেখে গেলো ভেবে পাচ্ছিনা। এখন আমার কি করা দরকার সেটাও ভেবে পাচ্ছি না। তবে যেভাবেই হোক এই জঙ্গল থেকে আগে আমাকে বের হতে হবে। তারপর অন্যকিছু নিয়ে ভাবা যাবে। আকাশের দিকে এক পলক তাকালাম। আকাশ মেঘলা তবে মাঝে মাঝেই মেঘের আড়াল থেকে আধখানা চাদটা উকি দিচ্ছে। তাতে হালকা হালকা আলোয় ঘন জঙ্গলটার ভয়াবহতা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আরেকটা বিষয় লক্ষ করলাম। আমার চোখে একটা চশমা পড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একদম মাথার পিছনের সাথে এডজাস্ট করা। চশমাটা খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। হাল ছেড়ে দিলাম। আমার কোন দিকে যাওয়া দরকার সেটাও বুঝতে পারছি না। তবে যেকোন একদিকে তো যেতেই হবে। অন্তত জঙ্গল থেকে বের হতে হবে। না জানি কোথাকার জঙ্গল এটা। জানোয়ারেরা আক্রমণ করে বসতে পারে যেকোন সময়। না আর এক মূহুর্ত দেরী করা যাবে না এখানে। হালকা আলোতে এগিয়ে যেতে হবে। তবে সামনের দিকেই যাবো আমি। একটু সরু রাস্তার মতো দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছে জঙ্গলের ভিতরে এর আগেও কেউ এই পথে গেছে। যাই হোক এটা ভেবে ভালো লাগছে যে এখানে মানুষ আছে।
.
সরু পথটা ধরে সামনের দিকে হাটতে শুরু করে দিলাম আমি। কিছুক্ষণ হাটার পর পিছনে কিছু একটার শব্দ শুনে থমকে দাড়ালাম। দাড়িয়ে শব্দটা আবার শুনার চেষ্টা করলাম। শব্দটা অনেক দূর থেকে আসছে বলে মনে হলো। কিন্তু একদম অন্যরকম শব্দ। এরকম শব্দ আমি আগে কখনো শুনি নি। কোনো হিংস্র জানোয়ার নয়তো আবার। পিছনে ফিরে তাকালাম। কিছুই চোখে পড়লো না। শব্দটা আবার শুনতে পেলাম। গায়ে কাটা দেয়ার মতো একটা শব্দ।কুকুরের কান্নার মতো শুনতে কিছুটা। কিন্তু মোটেও কুকুরের কান্না নয় এটা। আরো ভয়ংকর। গায়ের লোমগুলো নিমিষেই দাড়িয়ে গেলো। লোমকূপের ভিতর থেকে ঘাম বেরুতে লাগলো। কিছুক্ষণের জন্য শব্দটা আর শুনতে পেলাম না। যাই হোক শুনে কাজ নেই। আমার সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই কান্নাটা আবার শুনতে পেলাম। এবার মনে হলো আমার ঠিক পিছনেই অনেক কাছ থেকেই শুনা গেলো। আমি থমকে দাড়ালাম। ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালাম। কিছুই বুঝা যাচ্ছে না অন্ধকারে। তাকিয়েই রইলাম কিছুক্ষণ। একটু পরেই দেখতে পেলাম কালো একটা অবয়ব তৈরি হচ্ছে। এটা কি হচ্ছে! কালো অবয়ব টার চোখদুটো জলছে। আমার থেকে কিছুটা দূরে। আমি সেটার পায়ের দিকে লক্ষ করতেই কলিজাটা ধরাশ করে উঠলো। অবয়ব টার কোনো পা নেই। মনে হচ্ছে বাতাসে ভাসছে। এটা ভূত হোক আর যাই হোক কোনো জানোয়ার হতে পারে না। এতকিছু ভেবে কাজ নেই। এখন জ্ঞান হারালে চলবে না। নিজেকে মানসিক ভাবে শক্ত করার চেষ্টা করলাম। এই মুহুর্তে আমার দৌড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
.
এরপর সাত পাচ না ভেবেই আমি ছুট লাগালাম। যেভাবেই হোক আগে এই জঙ্গল থেকে বের হতে হবে আমাকে। তারপর হয়তো লোকালয়ে পৌছালে এই ভূতের হাত থেকে বাচতে পারবো। সেই পর্যন্ত এই ভূতের হাত থেকে আমাকে বেচে থাকতে হবে। এইসব ভাবছি আর দৌড়াচ্ছি। শরীরের সমস্ত শক্তি দুই পায়ে দিয়ে দৌড়ে চলছি আমি।
.
কতক্ষণ দৌড়াচ্ছি জানা নেই। কিন্তু এই জঙ্গল যেনো শেষ ই হচ্ছে না। পিছনে এবার আবার ওই কান্নার শব্দটা শুনতে পেলাম। কিন্তু এইবার একসঙ্গে অনেক গুলো। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছিনে তাকানোর চেষ্টা করলাম আমি। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে একটা নয় অনেকগুলো কালো অবয়ব বাতাসে ভেসে আসছে। আর সবগুলোর চোখেই নীল একটা জলন্ত আভা। আমি আরো শক্তি দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। এরা আমাকে পেলেই হয়তো মেরে ফেলবে। এতো জলদি মরতে চাইনা আমি।
.
এরপর আরো জোরে দৌড়াতে লাগলাম। হৃদ স্পন্দন কতখানি বেড়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর চোখে পড়লো একটা ফাকা জায়গা। সম্ভবত জঙ্গলের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আর কিছুক্ষণ দৌড়ালেই হয়তো বেচে যাবো।
.
আমি জঙ্গল পেরিয়ে ফাকা মাঠে নেমে দৌড়াতে লাগলাম। পিছনে ফিরে তাকালাম দেখলাম কালো অবয়ব গুলো জঙ্গলের শেষ মাথায় আমার দিকে রুক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। আর আমাকে তাড়া করছে না। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।
পড়ে গিয়ে দেখতে পেলাম একটা মেয়েকে। সেও পড়ে গেছে।আমি যেনো একটু সাহস পেলাম বুকে। যাক তবুও কোনো মানুষের দেখা মিললো। মনে হচ্ছিলো যেনো এতোক্ষণ নরকের ভিতরে ছিলাম। এরপর দুজনেই উঠে দাড়ালাম ..
মেয়েটাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো প্রথমে ..
--আপনি কে? এতো রাতে এখানে কি করছেন?
--কিছুনা। ঘুরতে এসেছিলাম এই এলাকায়। পথ ভুলে জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলাম।
--আপনার এখানে এতো রাতে আসা উচিৎ হয়নি। জায়গাটা অনেক খারাপ। চলুন আমার সাথে। আমি আপনাকে লোকালয়ে নিয়ে যাবো।
--কিন্তু আপনি কে? আর আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?
--নদীর ওইপারে আমার বাসা। আমি মাঝে মাঝেই রাতের বেলা এখানে আসি। এখন চলুন আমার সাথে।
.
আমি এতকিছু না ভেবে মেয়েটার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। যাই হোক অন্তত মেয়েটা আমাকে সাহায্য করছে। আমি কোথায় আছি সেটা দিন না হওয়া পর্যন্ত বুঝতে পারবো না। তবে কানের ইয়ারপিচটার জন্য সবার ভাষাই বুঝতে পারবো। আমি পিছন থেকে মেয়েটাকে লক্ষ করতে লাগলাম। সাদা একটা ড্রেস পড়েছে। অনেকটা ব্রিটিশ দের মতো। যে দেশের মেয়েই হোক বাঙ্গালী মেয়ে নয়। আমরা কিছুদূর যেতেই নদীর ঘাটে পৌছে গেলাম। নদীর ঘাটে আসার পর মেয়েটা যেনো দ্রুত হাটতে লাগলো। এতো জোরে হাটতে লাগলো যে আমি দৌঁড়েও নাগাল পাচ্ছি না। একটা মেয়ে কি করে এতো জোরে হাটতে পারে। আমি মেয়েটার পায়ের দিকে তাকাতেই কলিজাটা আবার মোচড় দিয়ে উঠলো। মেয়েটার পা নেই। পায়ের জায়গায় লেজের মতো কিছু একটা। মনে হচ্ছে হাওয়ায় ভেসে চলেছে। আমি থমকে দাড়ালাম। জঙ্গলে থাকাকালীন ভয়টা আবার ধরে বসলো। আমার পথ পাল্টানো উচিৎ। আমি এখনো ভূতের খপ্পরেই আছি। মেয়েটা নদীর ঘাট দিয়ে যেদিকে যাচ্ছে আমি সেদিকে না গিয়ে উল্টোদিকে দৌড় লাগালাম। কেননা মেয়েটা হয়তো গোপণ কোনো জায়গায় যাচ্ছে যেখানে আমাকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলবে। আমি তাই বিপরীতে ছুটতে লাগলাম প্রাণ পনে। ছুটতে ছুটতে একটা জায়গায় দাড়িয়ে পড়লাম। একটা বড় গাছ চোখে পড়লো সেখানে গিয়ে একটু বসলাম।
.
আজ অনেক দৌড়েছি। জানিনা আর কতোকিছুর সম্মুখীন হতে হবে। ভাবছি আর বিশ্রাম নিচ্ছি। কোনদিকে গেলে ভালো হয় সেটাই এখনো মাথায় ঢুকছে না। হঠাৎ আমার পাশেই কিছু একটার শব্দ পেলাম। মনে হচ্ছে কেউ কিছু একটা খাচ্ছে খুব শব্দ করে। সাহস করে একটু এগিয়ে গেলাম। গাছটার পিছনেই একটা ঝোপের মতো দেখা গেলো। আমি ঝোপের দিকে মাথা বাড়িয়ে দেখলাম। চাদেঁর আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম কিছুক্ষণ আগেই যে মেয়েটাকে রেখে এসেছি সেই মেয়েটাই ওখানে বসে বসে কি যেনো খাচ্ছে। মেয়েটা আমার দিকে মাথা তুলে তাকাতেই চমকে উঠলাম। মেয়েটাকে যেনো হিংস্র পশু মনে হচ্ছে। চোখের দৃষ্টি খিন হয়ে আছে। মুখে শুধু রক্ত। আরেকটু লক্ষ করতেই দেখলাম মেয়েটার হাতে একটা কলিজা আর পাশে পড়ে আছে মুন্ডুহীন একটা লাশ যার শরীরটা ছিন্নভিন্ন করে ছেড়া হয়েছে। আমার পচা মাংসের গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়েই আছে। হঠাৎ মেয়েটা আমার দিকে কলিজাটা বাড়িয়ে দিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো। আমার বুক কেপে উঠলো এসব কি হচ্ছে আমার সাথে। আর এক মুহুর্ত দাড়ালাম না। আবার ছূটতে লাগলাম। কোনো গন্তব্য নেই আমার। তবে সকাল না হওয়া পর্যন্ত আমার ছুটতে থাকতে হবে হয়তো। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ থেমে গেলাম। সামনে দেখলাম কেউ একজন পিছনে ফিরে দাড়িয়ে আছে। কালো আলখাল্লা জাতীয় কিছু একটা পড়ে আছে। অনেক লম্বা। এটা ভূত না তো আবার। পায়ের দিকে তাকালাম। পা আছে। তাহলে কি মানুষ!
.
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনি?
ঘুরে দাড়ালো লোকটা। দেখলাম এটা ম্যাক্স। ম্যাক্স আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমার দিকে তেড়ে এলো। আবার একটা ইঞ্জেকশন এর সুচ ঢুকিয়ে দিলো আমার শরীরে। নিস্তেজ হয়ে গেলাম আমি।
.
--------চলবে -------
Reactions

Post a Comment

0 Comments