---লেখকঃ Khalid Hasan---
--------দ্বিতীয় পর্ব ------
বিশাল দেহি লোকটাও ঠায় দাড়িয়ে আছে আমার সামনে।ভয়েতো আমার শিরদাঁড়া দিয়ে শিতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপ দিয়ে অঝোর ধারায় শ্রাবণ শুরু হয়ে গিয়েছে।এরকম অলৌকিক ব্যাপার আমার সাথে আগে কখনো ঘটে নি। আমি শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গেলাম এমন সময় দেহটা নড়ে চড়ে উঠলো। হঠাৎ একটা আলো জলে উঠলো। তাকিয়ে দেখলাম দেহটা একটা লন্ঠন জাতীয় কিছু একটা আলোর উতস জালিয়েছে। দেখতে অনেকটা কেরোসিন চালিত লন্ঠন এর মতো লাগলেও আসলে আলোটা ইলেক্টিক্যাল। মনে হচ্ছে উন্নত ব্র্যান্ডের কোনো চার্জার লাইট। দেহটা এবার প্রথম কথা বলতে শুরু করলো।
--আসলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাহনটি ছিটকে গেছিলো। তো কি খবর মি.খালিদ? কেমন আছো?
আমি অবাক হয়ে গেলাম। একদম মানুষের মতোই গলার সর। এলিয়েন রা বাংলা বলতে পারে জানতাম না তো! তার কথায় আমিও ভদ্রভাবে উত্তর দিলাম।
--জী আমি ভালো আছি। কিন্তু আপনি কে? আর আপনি এই বাহনে কিভাবে আসলেন? আপনি কি এলিয়েন?
আমার কথায় এবার লোকটি হাসতে শুরু করলো। একদম মানুষের মতোই। আমি জোকস বলেছি নাকি হাসতে হবে! তাহলে এলিয়েনরাও কি মানুষের মতোই হয়!
লোকটি এইবার বললো ..
--আসলে আমি তোমার মতোই একজন মানুষ।
এরপর সে তার মুখের সামনে আলোটা ধরলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম লোকটার উচ্চতা প্রায় সাত ফিট হবে। দেহটা বিশাল আকৃতির। গায়ের রং কুচকুচে কালো। একদম আফ্রিকানদের মতো। মুখটা চকচক করছে। মনে হচ্ছে গায়ে তেল মেখেছে। তবে আসলে তা নয়। অতিরিক্ত কালো হওয়ার কারণেই এমনটা দেখাচ্ছে। এরপর সে বললো ..
--আমার নাম ম্যাক্স। তুমি আমাকে না চিনলেও আমি তোমাকে চিনি।
আমি অবাক হলাম। একজন অপরিচিত লোক আমাকে কিভাবে চিনতে পারে! জিজ্ঞেস করলাম।
--আসলে আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন?
সে আমার হাত থেকে ঘড়িটা নিলো। এরপর কোথায় যেনো চাপ দিয়ে ঘড়ির বিপ বিপ শব্দটা বন্ধ করে দিলেন। এরপর বল্লেন ..
--তোমার দাদু বলেছিলো তোমার ব্যাপারে।আমরা একসাথেই কাজ করতাম। আসলে এই ঘড়িটা একটা ট্রাকিং ডিভাইস যার মাধ্যমে আমি তোমার অবস্থান জানতে পেরেছি এবং তোমার সামনে আসতে পেরেছি। আর আমি তোমার দাদুর মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করছি।উনার মৃত্যুর আগে তোমার ব্যপারে সব জানিয়ে গেছে। তুমি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছ তোমার দাদুর গোপণ ব্যাপারগুলো আর তোমাকে দেয়া দায়িত্বের ব্যাপারে?
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম।
-- হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। আপনি কি সবকিছু জানেন? জানলে দয়া করে আমায় সব বলে দিন। আমি এখনো কিছুই বুঝতে পারছি না। আর এই ঘড়ির ব্যপারেও কিছু বুঝতে পারছি না।
ম্যাক্স এবার মুচকি হেসে বললো ...
--হা হা। তুমিতো এখনো ঘড়িটার বিপ বিপ শব্দটাই বন্ধ করতে শিখনি। তবে হ্যাঁ ধীরে ধীরে সব শিখে যাবে। আসলে এই ঘড়িটা বড় ব্যপার নয়। এটাতো সামান্য। আরো অনেক কিছু রয়েছে দেখার মতো। তোমার দাদু তোমাকে এটা দিয়েছে শুধুমাত্র আমি যেনো তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি সেজন্য।
--আপনি কি আফ্রিকান?
--হ্যাঁ আমি আফ্রিকান। তুমি হয়তো ভাবছো আমি কিভাবে ঝড়ঝড় করে বাংলা বলছি। তবে শুনো,এইযে আমার গলায় এই মেশিনটা দেখতে পাচ্ছ এটা আমার চারিদিকের কথাগুলো রিসিভ করে আর কানে এই মেশিনটা দেখতে পাচ্ছ এইটা আমার নিজস্ব ভাসায় ট্র্যানসিলেট করে আমায় শুনায়। তারপর আমি যা বলি তাও এই রিসিভার মেশিনটাই ট্রান্সিলেট করে তোমার ভাষায় শুনিয়ে দেয়।
আমি তার গলায় আর কানে দুটো মেশিন দেখতে পেলাম। খুবই ছোট আকৃতির। গলারটা মালার মতো ঝুলিয়ে দেয়া। আর কানের টা অতি সুক্ষ্ম। ইয়ারপিস জাতীয় ডিভাইস।
এমন উন্নত প্রযুক্তির জিনিস আগে কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। বাংলাদেশে তো কখনোই না।
সে বললো,খালিদ তুমি হয়তো তোমার দাদুর সম্পর্কে জানার জন্য ব্যকুল হয়ে আছো। তবে তোমার পূর্ব প্রস্তুতি ব্যতীত তোমায় কিছুই বুঝানো যাবেনা। তোমার দাদুর সম্পর্কে জানতে হলে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে। এজন্য তোমাকে পারিবারিক ব্যপার সামাল দিতে হবে আর মানসিক ভাবেও প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা তুমি পৃথিবীর এক অলৌকিক যায়গায় যাচ্ছ। যেটা সাধারণ মানুষদের ধারণার বাইরে। আমি তোমাকে একটা নতুন ঘড়ি দিচ্ছি। তোমার দাদুর ঘড়িটা তুমি রেখে দিও। আর এই ট্র্যান্সিলেটর টা নাও। সে আমাকে ভাষা বুঝার মেশিনটা আর একটা ঘড়ি দিলো। আমি তা নিয়ে আমার পকেটে রেখে দিলাম।
রাখার পর জিজ্ঞেস করলাম ..
--আমি এখন কি করবো?
--তুমি এখন তোমার বাসা থেকে কি অযুহাত দিয়ে বের হবে সেটা নিয়েই ভাবো। কেননা তুমি হুট করেই গায়েব হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। আর হ্যাঁ এইসব ব্যাপারে কারো সাথে ডিসকাশন করো না। অত্যন্ত গোপণ ব্যপার এসব। আর ডিভাইস গুলো সাবধানে রাখবে। আর তোমার প্রস্তুতির পর সবকিছু নিয়ে এই জায়গায় এসে ঘড়ির সাইডের বাটনটায় ক্লিক করবে। আর তাহলেই আমার কাছে সিগন্যাল পৌছাবে। আমার এখানে পৌছাতে সর্বোচ্চ আধাঘন্টা লাগতে পারে।
.
এমন সময় আমার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। নিশ্চয়ই বাবার ফোন। এত রাতে এখনো বাসায় ফিরিনি বলে হয়তো চিন্তা করছে বাসার সবাই। আমার ফোনটা রিসিভ করার ইচ্ছা হলো না। কেনো জানি আমার এই অপরিচিত লোকটার প্রতি আগ্রহ হচ্ছে খুব। তাই সবকিছু বাদ দিয়ে এই লোকটার বক্তব্য শুনতে ইচ্ছা করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ..
আসলে আপনি কি বিজ্ঞানী নাকি? এইসব ডিভাইস আপনি কোথায় পেলেন? আমার মনে হচ্ছে এসব কোনো সাধারণ ডিভাইস না।
...সে আবারো একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো..
--না আমি কোনো বিজ্ঞানী নই। তুমি সব কিছুই জানতে পারবে আমার সাথে গেলে।
তারপর ম্যাক্স আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বললো ,আমার মনে হয় এখন তোমার বাসায় চলে যাওয়া উচিৎ। তোমার বাসায় হয়তো সবাই চিন্তা করছে তোমার জন্য। আজকের মতো বিদায়। আশা করি খুব শিঘ্রই দেখা হবে।
.
এরপর সে আমাকে বিদায় জানিয়ে তার স্পেস শিফটে গিয়ে উঠে বসলো। এরপর দরজা লাগিয়ে ধোঁয়া ছুটিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উড়ে যেতে লাগলো জোড়ালো শব্দ করে। আমি কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম। যতক্ষণ পর্যন্ত আকাশযানটা দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত। এরপর ঘড়িতে দেখলাম রাত সারে এগারোটা বেজে গেছে প্রায়। দাদুর কবরের দিকে একবার তাকিয়ে বাড়ির পথে হাটতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম কোন অযুহাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে ম্যাক্স এর সাথে যাওয়া যায়।
.
ভাবতে ভাবতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করতেই বাবার গলা শুনতে পেলাম ..
--হ্যালো খালিদ কোথায় তুই? এতো রাতে এখনো বাইরে কি করছিস?
আমি বললাম
--দশ মিনিটে আসছি
বলেই ফোন কেটে দিলাম।
.
বাসায় গিয়ে আর কারো সাথে বেশি কথা বললাম না। সবাই জানে দাদুকে হারানোর পর আমি একটু অন্যরকম আনমনা হয়ে গেছি। তাই কেউ কিছু আর জিজ্ঞেস করলো না। সবাই জানে আমি এতক্ষণ দাদুর কবরের পাশেই ছিলাম । তবে সেখানে এতক্ষণ কি কি ঘটেছে তার কিছুই জানেনা তারা। আর দাদুর ব্যাপারেও কেউ জানে না ভালো করে। তবে আমি জানবো। আমার অনেক কিছু জানার বাকি আছে। আমার দাদুর সম্পর্কে অনেকেই বলতো দাদু নাকি জীন বস করতে পারতেন। তিনি নাকি মাঝে মাঝে তাই জিনের দেশে ঘুরতে যান। তাই মাঝে মাঝেই তাকে খুজে পাওয়া যেতো না। কখনো কখনো একমাসেরও বেশি সময় পর হঠাৎ করে বাসায় ফিরতেন। এমনকি আমি নিজেও এসব অনেকটা বিশ্বাস করতাম। তবে আজকের ঘটনার পর ধারণা টা একটু বদলে গেলো। তিনি অবশ্যই জিনের সাথে যাননি তবে নিশ্চই অন্য কোনো গোপণ জায়গায় যেতেন। যেখানে কদিন পর আমি যেতে শুরু করবো।
.
এসব ভাবতে ভাবতে আমার রুমে চলে গেলাম। গিয়ে পকেট থেকে ডিভাইস গুলো বের করে আমার ড্রয়ারে রেখে দিয়ে তালা মেরে দিলাম যাতে কেউ না দেখে। কেননা এসব খুবই গোপণ ব্যপার। কেউ এইসব দেখে ফেলে যদি জানতে চায় এইসব কোথায় পেলাম তখন কি হবে? তাই গোপণ করে রাখাই ভালো। এরপর ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লাম। কাল আবার একটা অযুহাত বের করতে হবে বাড়ি ছাড়ার।
.
----- চলবে ----
0 Comments
please Wait