---মিরাকল মিশন :ফরেস্ট মিসট্রি ---


--লেখকঃ Khalid Hasan ---

-------ত্রয়োদশ পর্ব --------



মায়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। আর বলল ..
--এই সামান্যতম কাজটাও পারলে না?
আমি একটু লজ্জিত হয়ে বললাম
--ইয়ে মানে, আসলে আমি চোখ বন্ধ করে প্রবেশ করেছিলাম।
--উফ তোমাকে নিয়ে আর পারিনা। এইভাবে কাজ করলে রাজত্ব চালাবে কিকরে!
নিকুচি করি তোর রাজত্বের(আমি বির বির করে বললাম)
--আরে আরে আমি শিখে যাবো সব তুমি কোনো চিন্তা কোরোনা। সবে তো শুরু তাই একটু নার্ভাস ফিল করছি। এর আগে কখনো এইসব দেখিনিতো তাই।
--আচ্ছা এখন চলো আমার সাথে সামনের দিকে।
মায়া আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি যেতে যেতে তাকাতে লাগলাম চারদিকে। সরু একটা গলির মতো। দুইপাশে দেয়াল। আর দেয়ালে শুধুই আয়না। একটার পর একটা দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে।
.
কিছুদূর যেতেই দেখলাম সরু গলিটা সামনে দুই দিকে ভাগ হয়ে গেছে। মায়া আমাকে ডান দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ডান দিকের গলি দিয়ে আবার এগুচ্ছি। যেতে যেতে আবার চোখে পড়লো দুইপাশে দুইটা গলি। কিন্তু এইবার সামনেও রাস্তা আছে। কিন্তু মায়া সামনে এগুলো না। বাম পাশের গলির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো আমাকে। মায়া আমাকে মিনিটের পর মিনিট এভাবে অলিগলিতে ঘুরাতে লাগলো। আমার মাথা গুলিয়ে যেতে লাগলো। বার বার পিছনে ফিরে তাকাতে লাগলাম। এখন আমাকে যদি এখানে ছেড়ে দিয়ে বলা হয় ফিরে যাওয়ার জন্য তো সারা জীবনেও রাস্তা খুজে পাবোনা। কোন গলি থেকে কোন গলিতে ঢুকেছিলাম কিচ্ছু মাথায় নেই। আমাদের দেশের ঢাকা শহরের গলি গুলোও মনে হয় এমনটা ধাঁধা টাইপের নয়। হঠাৎ মায়া একটা জায়গায় গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।
--বুঝলে খালিদ, এটা হচ্ছে আমার জাদু জগতে প্রবেশের আরেক গোলক ধাঁধা। যে ওই আয়না দিয়ে প্রবেশ করবে সারাজীবন এই গোলক ধাঁধাঁ দিয়ে ঘুরতে থাকবে। কারণ একবার ভুল গলিতে চলে গেলে সে আর রাস্তা খুজে পাবেনা। এমনকি গলির পর গলি যেতেই থাকবে গলির শেষ হবেনা। তোমাকে আমি এখন এই আয়নার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করাবো। আর তারপরই দেখতে পাবে আমার জাদু জগতের সকল কর্ম আমি কিভাবে সাধন করি। কত কাজের জিনিস আছে আমার জাদুশালায়।
--মায়া আমাকে এই গোলক ধাঁধা টার রাস্তা গুলো শিখাবে না?
--সেটা অমাবশ্যার পর শিখতে পারবে। তার আগে তুমি জাদুও শিখতে পারবে না আর রাস্তাও মনে রাখতে পারবে না। রাস্তা মনে রাখার কৌশল তুমি রাজা হওয়ার পর আমি শিখিয়ে দেবো।
..মায়ার কথাগুলো শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। তার মানে মৃত্যুর আগে মায়া আমাকে শিখাবে না এগুলো। কিন্তু না শিখলে কাজ করবো কিভাবে। আর আমার মনে হয় এই জাদুশালাতেই সেই তরল লুকায়িত আছে। রাস্তা না জানলে আমি মায়ার অগোচরে তা কিভাবে আমার কবজায় আনবো। আর সেটাতো অমাবশ্যার আগেই পেতে হবে আমাকে। ভাবতে ভাবতে চিন্তার গভীরে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মায়ার ডাকে হুসে ফিরলাম ..
--কি ভাবছো? চলো এখন এই আয়নার ওইপাশের জাদু দুনিয়াতে।
আমার হাত টেনে নিয়ে চললো সেই আয়নাটার দিকে। এই আয়নাটা অনেক সাজসজ্জায় জরানো। আয়নাটা মনে রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু মায়ার অজান্তে এই আয়নায় পৌছাবো কিকরে তাই ভাবছি আমি।
.
ঢুকতে লাগলাম সেই আয়নার ভিতরে। এইবার চোখ খুলেই প্রবেশ করছি আমি। কিন্তু আয়নায় হাত দিতেই যেনো হাত আয়না ছেদ করে ওপাশে চলে গেলো। আমি অবাক হলাম। মায়ার দিকে তাকালাম। মায়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। প্রবেশ করতে লাগলাম দুজনে আয়নার ওপারের দুনিয়ায়।
.
ওহ মাই খোদা। অন্ধকার ছাড়া কিছুই নেই।ঘুপঘুপে অন্ধকারে ভয় পেতে লাগলাম। হঠাৎ মায়া হাত ছেড়ে দিলো ভয়টা আরো বেড়ে গেলো। মায়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো..
--ভয় পেয়োনা খালিদ। একটু অপেক্ষা করো এখানে। আমি মোম জালিয়ে দিচ্ছি।
..কথাটা বলেই মায়া সামনে কিছু একটার দিকে এগুতে লাগলো। আমি অবাক চোখে লক্ষ করলাম। মায়ার চোখ দিয়ে এক প্রকার নীল আলো বের হচ্ছে। সে নির্বিঘ্নে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে জলন্ত চোখ নিয়ে।অন্ধকারেও সে স্পষ্ট দেখে চলেছে সব।
.
একটু পরেই একটা মোম জালিয়ে দিলো সে। ঘরে একটা আবছা আলোর তৈরি হলো। পরে ঘরের চারিদিকে মোম লাগাতে লাগলো সে। আস্তে আস্তে পুরোটা ঘরই অসংখ্য মোমের আলোয় ছেয়ে গেলো। আমি ঘরের চারিদিকে দেখতে লাগলাম। বিরাট বড় একটা ঘর। ঘরের ভিতরে অসংখ্য মূর্তিতে ভরা। সবগুলো মূর্তির রূপ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। একটা লম্বা জীভ ওয়ালা বিরাট কালি মূর্তি আছে। সাথে অনেক মূর্তি। রাক্ষস টাইপের চেহারা সবগুলোর। দেখলেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। আমার ভয়ে অবস্থা শেষ। অসস্তিকর লাগতে লাগলো।
.
--মায়া এখান থেকে চলো কেমন যেনো লাগছে।
--এত্ত জলদি! অনেক কিছু দেখাবো তো তোমায়। এসো এদিকে।
আমাকে নিয়ে ঘরের কোনার দিকে গেলো। সেখানে কিছু বই দেখালো।
--এইগুলা আমার জাদুবিদ্যার বই। আমি নিজে লিখেছি। যে মূর্তিগুলো দেখতে পাচ্ছো সবগুলো একেকটা শয়তানি রাজ্যের রাজত্ব করে। আমি সবগুলো শয়তানের উপাসনা করি আর তাদের থেকে জাদুবিদ্যা আয়ত্ত করি। তারপর এই বইগুলোতে লিখে রাখি সব। এখন বইগুলো কাজে লাগবে তোমাকে জাদু শেখানোর জন্য। তবে তুমি এখনই এই বই পড়তে পারবে না। পড়তে হলে তোমাকে আগে মরতে হবে। অমাবশ্যার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
..কথাগুলো বলে মায়া একটা মুচকি হাসি দিলো। আমার অপেক্ষা করারও ইচ্চা নেই আর এইসব শেখারও কোনো ইচ্ছে নেই। আমি খুজতে লাগলাম সেই প্রতিষেধক তরলটা। যেটা দিয়ে অমাবশ্যার রাতে মায়াকে বধ করবো। কিন্তু সেটা কোথায়। এরপর মায়া আমাকে সেই কক্ষে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অনেক কিছু দেখাতে লাগলো। এরপর নিয়ে গেলো একটা কাচের বাক্সের সামনে। সেই কাচের বাক্সের উপরে একটা ঢাকনা যুক্ত তলোয়ার রাখা আছে দেখলাম। মায়া সেটা তুলে নিলো আর আমার হাতে দিলো। কিন্তু আমার চোখ আটকে গেলো কাচের বাক্সের ভিতরে। সেখানে একটা ইঞ্জেকশন তরলে চুবিয়ে রাখা। সাথে জাদু বিদ্যার আরো অনেক তাবিজ কবস রাখা আছে সেখানে। তাহলে এটাই সেই তরল।
.
মায়া আমার হাতে তলোয়ার টা তুলে দিয়ে বললো..
--তলোয়ার টা তুমার কাছে রাখো খালিদ। তুমি রাজা হতে যাচ্ছ। এই তলোয়ার এখন তোমার।
--এটা দিয়ে কি হবে?
--এটা কোনো সাধারণ তলোয়ার নয়। এটা দিয়ে যেকোনো আত্মাকে শেষ করে দেয়া যায়। এটা আমার জাদুশক্তির সবার উপরে শক্তিধর। আমি তোমাকে উপহার দিলাম এটা।
--ওকে আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম তোমার দেয়া উপহার।
আমি তলোয়ার টা আমার কাছে রেখে দিলাম। অনেক কাজে আস্তে পারে এটা। মায়াকে কাচের বাক্সের ভিতরে ইশারায় দেখিয়ে বললাম ..
--আচ্ছা মায়া কাচের বাক্সের ভিতরের ওই তরলটা কিসের?
মায়া একটু থতমত খেয়ে গেলো দেখলাম। বললো..
--ওগুলো তুমি পরে জানতে পারবে। এখন ওইসব তোমার মাথায় ঢুকবে না। মায়া অন্যদিকে যেতে লাগলো। আমি মায়ার অগোচরে কাচের বাক্সের উপর হাত দিলাম আর সাথে সাথে একটা ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। মনে হল শরীর দিয়ে এক প্রকার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে গেলো। কারেন্টের শক খেয়েছি আমি। কিন্তু এখানে তো কারেন্ট থাকার কথা নয়। মায়া আমাকে দেখে ফেললো পড়ে যাওয়ার সময়।
--উফ আমাকে না জানিয়ে ওটাতে হাত রাখতে গেলে কেনো? ওটাতে বিজলীর দেয়াল দিয়ে রাখা আছে। আর ওটা কেউ খুলতে পারে না আমি ছাড়া। যেইটা জানোনা সেইটা নিয়ে বেশি কিছু করো না।
..আমি মায়ার কথায় মনে মনে একটু হতাশ হলাম। তবে আশা হারালাম না। ওই বিজলীর দেয়াল ভেদ করার নিশ্চয়ই কোনো পদ্ধতি আছে। আমাকে সেইটা জানতে হবে।মায়া আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আরো অনেক কিছু দেখালো তার জাদু জগতের। আমার আর কোনোদিকে মন নেই। আটকে গেছি সেই কাচের বাক্সতে। কিভাবে সেই বাক্স খুলবো সেই চিন্তাই শুধু মাথায় ঘুরছে। সবকিছু দেখানোর পর মায়া আবার আমার হাত ধরে ফেরার পথে পা বাড়ালো। ফেরার সময় আবার আমার সবকিছু গুলিয়ে যেতে লাগলো। আয়না আর অলিগলিতে আবার মাথা চক্কর দিতে লাগলো। একসময় ফিরে এলাম সেই জাদু জগতের ভিতর থেকে।
.
তলোয়ার টা সাথে নিয়ে এসেছি আমি।
..মায়া বললো ..
--এটা তুমি আপাতত কোথাও রেখে দাও। তবে অমাবশ্যার পরের দিন থেকে সবসময় এটা তোমার কাছে রাখবে। তাহলে সবাই তোমাকে আরো বেশি ভয় পাবে।
..আমি সেটা রেখে দিলাম। আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলাম। সবাইকে তরলটার ব্যাপারে বললাম আর তলোয়ার টা রিমিকে ভালোভাবে রেখে দিতে বললাম।
সেই কারেন্টের দেয়াল দেওয়া কাচের বাক্সের কথা তাদেরকে জানালাম।আর তলোয়ার টার ক্ষমতা সম্পর্কে খুলে বললাম সব।সব শুনে রিমি বললো..
--আমার মনে হয় ওই বাক্স খোলার জন্য কোনো গোপণ মন্ত্র আছে।
--আমারো তাই মনে হয়। সবাই একসাথে বললো।আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম..
--এখন আমি কিভাবে সেই দেয়াল ভেদ করবো। হাতে মাত্র দুইদিন আছে। এর মধ্যেই কাজ সারতে হবে।
--তুই মায়ার পেছনে গোপনে লেগে থাক। সে নিশ্চয়ই আবার সেই জাদুজগতে যাবে। নিশ্চয়ই সেই বাক্স খুলবে। পিছু নিয়ে দেখে আসতে হবে শুধু কিভাবে খুলে সেই বাক্স। তারপর পাওয়া যাবে মায়াকে বধ করার অস্ত্র।
আমি রিমির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বললাম ..
--এই প্রথমবারের মতো মনে হলো তুই একটা বুদ্ধিমতি মেয়ে।
--হয়েছে হয়েছে তুই আমার প্রশংসা করতে আসিসনা তোর মুখে তা মানায় না।
আমি হেসে দিলাম রিমির কথায়। জীবনের প্রথম রিমির প্রশংসা করলাম আজ। হাহাহা।
--আচ্ছা তাহলে আজ রাতে আমি গোপনে মায়ার পিছু নিয়ে আবার সেই জাদু জগতে যাবো। কি বলিস তোরা?
সবাই একসাথে সম্মতি দিলো।
.
রাতে আমি মায়ার সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়ে আছি। আমার ইচ্ছাতেই হচ্ছে সব। কখন ঘুমিয়ে গেলাম হুসই পেলাম না। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো। চোখ খুলে দেখলাম ঘরে আবছা আবছা আলো। সেই আলোয় দেখলাম মায়া ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমি তরিঘরি করে উঠে পড়লাম। পিছু নিলাম মায়ার। বিছানার পাশে একটা টেবিলে আঙ্গুর ফলের স্তুপ।যতগুলো নেয়া যায় নিলাম আঙ্গুর ফল। তবে খাওয়ার জন্য নয় কাজে লাগানোর জন্য । মায়া গেলো সেই ঘরে যেখানে আয়না আছে।
.
আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে সে। আমি একটু অন্ধকারে আছি তাই আমাকে মায়া দেখলো না। অন্ধকারে আয়নাতেও আমার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে না তাই মায়া আমাকে দেখলো না। কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম মায়াকে। মায়া একটা দানবীর মতো হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আয়নার প্রতিবিম্ব দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে একটা রাক্ষসী দাড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। সেই রাতের দানব গুলোর মতো হয়ে গেছে। খুব কুৎসিত।মুখটা বাঘের মতো হয়ে গেছে । তবুও আমি সাহস হারালাম না। মায়া আস্তে আস্তে সেই আয়নায় প্রবেশ করতে লাগলো। আমার সাথে আমার ফোনটা আছে। ফোনের স্ক্রীনের হালকা আলোয় আমিও এগিয়ে যেতে লাগলাম।
.
মায়া একসময় আয়নার ভিতরে ঢুকে গেলো। তারপর আমিও ঢুকতে লাগলাম চোখ খুলে। এইবার সাহসের মাত্রা টা একটু বাড়িয়ে নিয়েছি। ভয় পেলে চলবে না। আয়নার ভিতরে ঢুকেই পিছনে ফিরে দেখলাম। একসাথে তিনটা আয়না দাড় করানো। আমি ডান পাশের টা দিয়ে ঢুকেছি। সেখানে নিচে কয়েকটা আঙ্গুর ফল রেখে দিলাম। এরপর আবার মায়ার পিছু নিলাম আমি। মায়ার যেনো কোনোদিকে খেয়াল নেই। জলন্ত চোখ নিয়ে সে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আমি পিছু পিচু যেতে লাগলাম। আর আঙ্গুর ফল গুলো প্রত্যেক গলিতে ছিটাতে লাগলাম। ফেরার সময় এই আঙ্গুর ফল গুলো আমাকে রাস্তা দেখাবে। কয়েকটা আঙ্গুর ফল খেয়েও নিলাম। গলা শুকিয়ে গেছিলো তাই।
.
অলিগলির ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে একসময় মায়া সেই আয়নার সামনে দাড়ালো। এইবার জাদুজগতে প্রবেশ করবে সে। আমি একটু পেছনেই দাড়িয়ে। মায়া আস্তে আস্তে প্রবেশ করতে লাগলো। আমি আমার ফোনের ভয়েস রেকর্ডিং চালু করলাম। আর মায়ার পিছু পিছু এগিয়ে যেতে লাগলাম। একসময় প্রবেশ করলাম আমরা। আমি দেখলাম মায়া সেই কাচের বাক্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ এইবার নিশ্চয়ই বাক্স খুলবে। আমি দূর থেকে ফোনটা লকড অবস্থায় ফ্লোরে রেখে দিলাম। তারপর ঠেলা মেরে বাক্সের দিকে পাঠিয়ে দিলাম ফোনটাকে।একটু শব্দ হতেই মায়া এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। আমি গা,ঢাকা দিলাম। অন্ধকারে আমাকে এখনো দেখতে পায়নি মায়া। মায়া বাক্সের পাসওযার্ড থুক্কু মানে কারেন্ট এর দেয়াল সরানোর জন্য কি যেনো মন্ত্র আওরাতে লাগলো জোরে জোরে। কি ভয়ঙ্কর সেই সুর। বুঝলাম না এটা কোন ভাষার মন্ত্র। গা,শিউরে উঠে। সাথে সাথেই বাক্স খুলে গেলো। মায়া বাক্স থেকে কি যেনো একটা বের করলো। আর সেটা বের করে নিয়ে আবার একটা মন্ত্র পড়তে লাগলো। আর আবার বাক্সটাতে কারেন্টের দেয়াল এসে গেলো। মায়া এবারে যেতে লাগলো বড় সেই কালি মূর্তিটার দিকে। নিশ্চয়ই পূজায় বসবে। আমি চুপি চুপি অন্ধকার হাতরে হাতরে ফোনটা কুড়িয়ে নিলাম। যাক রেকর্ড সাকসেস হয়েছে। আমি লক্ষ করলাম মায়া ধ্যানে মগ্ন হয়ে গেছে আর মন্ত্র আওরাতে শুরু করেছে। না এখানে আর থাকা যাবেনা। তাড়াতাড়ি যেতে হবে তানাহলে ধরা পড়ে যাবো আবার। আমি সেই আয়না দিয়ে বের হয়ে এলাম। ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে আঙ্গুর ফল গুলো লক্ষ করলাম আর গলির ভিতর দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। তারপর সেই আয়নার জগত থেকে বেড়িয়ে এলাম।
.
সবাইকে বললাম সেই বাক্স খোলার ব্যাপারে।
রিমি বলে উঠলো..
--তবে আজ আর হবেনা। মায়া হয়তো আজ সারারাত ধ্যানে থাকবে। তাই সেখানে যাওয়া যাবেনা। অমাবশ্যার রাত আর একদিন পর। তারমানে হাতে মাত্র একদিন সময় আছে। তার আগেই তরলটা হাতে পেতে হবে। কাল তুই সেই আয়নার জগত থেকে তরলটা নিয়ে আসবি। আর অমাবশ্যার রাতে সেটা মায়াকে দিতে পারলেই কাজ শেষ।
.
এরপর আর আমাদের মাঝে কোনো কথা হলোনা। সবাই ক্লান্ত। সবাই ঘুমাতে চলে গেলাম। আর অপেক্ষা শুধু কালকের। কালকেই মায়ার মায়া খেলার সব পন্ড করে দিবো আমি। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম আমি।
.
.
-----চলবে----
Reactions

Post a Comment

0 Comments