---মিরাকল মিশন :ফরেস্ট মিসট্রি ---


--লেখকঃ Khalid Hasan---

-------সপ্তম পর্ব --------

.

আড়ি পেতে শুনলাম আসাদ আর রাহাত আম্রাথু বলে চিৎকার করছে। আমরা আবার রাস্তায় এসে দাড়ালাম। তারা আমাদের কাছে আসতেই সবাই সবার দিকে অবাক হয়ে তাকাতাকি করতে লাগলাম।
--কিরে খালিদ তোরা পিছনে চলে এসেছিস কেনো? আর কোন দিক দিয়ে এলি? তোদের না সামনের দিকে যাওয়ার কথা?
আসাদের কথায় আমি একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললাম ..
--আমরা একটা গোলাকার রাস্তায় ঘুরছি। একই পথে বার বার ফিরে আসছি।আম্রাথুকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না।
--কিন্তু আমার তো রাস্তাটা একদম সোজা মনে হচ্ছে। গোল হলে তো পথের বাক থাকতো। কিন্তু রাস্তা তো একদম সোজা।
--হুম সমস্যা তো ওই জায়গাতেই। আমার মনে হচ্ছে এটা কোনো জাদুকরি মায়া। কেউ এই জঙ্গলে মায়ার জাল পেতে রেখেছে। আর আমরা সবাই মায়ার জালে ফেসে গেছি।
--মাথা কি গেছে নাকি তোর।মায়া বা জাদু বলে কিচ্ছু নেই।
আসাদের কথায় আমি আর কিছু বলছি না। রিমি এখনো আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে।
--কি যে হচ্ছে আমাদের সাথে কিছুই বুজছি না।
রিমির কথার প্রতিউত্তরে বললাম ..
--আরো কত কি হবে তাও ধারণার বাইরে।আমার মনে হয় এই রাস্তায় হাটাহাটি করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ঘুরে ফিরে একই জায়গায় আসতে হবে।
--তাহলে আমরা এখন কি করতে পারি?
প্রশ্ন করলো রিমি..
--পথ পাল্টাতে হবে। ভিন্ন পথে যেতে হবে।
--কোন দিকে যাবো? প্রশ্ন করলো আসাদ।
--রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের ভিতরে যাবো।
.
রাস্তা থেকে নেমে এইবারে জঙ্গলে ঢুকে গেলাম। কোনদিকে যাচ্ছি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের সাথে কোনো কম্পাস নেই। দিক নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না।কিছুদূর যেতেই সবার টর্চলাইট গুলোতে সমস্যা শুরু হয়ে গেলো। এই জলছে তো আবার ঘপ করে নিভে যাচ্ছে।
--টর্চগুলোর আবার কি হলো! ধুর..
বিরক্ত হয়ে বললো আসাদ। টর্চের গায়ে বারি মারতে লাগলো সে। রাহাতও একই কাজ করছে। আমি কিছু বুঝলাম না। হঠাৎ করে সবগুলো টর্চে একসঙ্গে প্রবলেম শুরু হলো কেনো। তখনই রিমি কানে ফিসফিস বললো ..
--সামনে তাকিয়ে দেখ ওগুলো কি!
.
সবাই সামনে তাকালাম। টর্চগুলো নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। আর কোনো আলো দিচ্ছে না। তাই অন্ধকারে তাকিয়ে দেখলাম। একজোড়া নীল চোখ আমাদের সামনে কিছুটা দূরে ভাসছে। অন্দকারে চোখজোড়া ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই ভয়ে নিঃস্তব্ধ হয়ে গেছি।
--খালিদ এখন কি করবি? আবার ফিসফিসিয়ে বললো রিমি।
.
আমি চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। এখন কি করা উচিৎ আমাদের। অবস্থা আরো বেগতিক হয়ে গেলো। একজোড়া চোখের যায়গায় এবার জোড়ায় জোড়ায় আরো অনেক চোখ জলে উঠতে লাগলো। আমি এবার প্রথমবারের মতো আমার ওয়ালথার টা বের করলাম। চোখগুলো এগিয়ে আসতে লাগলো আমাদের দিকে। এরা যাই হোক মানুষ হতে পারে না। দেখি ওয়ালথার টা দিয়ে সামাল দেয়া যায় কিনা।
.
একজোড়া চোখের দিকে ওয়ালথারটা তাক করে ট্রিগারে চাপলাম। গুলি লাগলো। না কিছুই হলো না। সামনে আসছে তো আসছেই। আমারা পিছনে পিছিয়ে আসতে লাগলাম। ওরা এক পা করে এগুচ্ছে আর আমরা পিছাচ্ছি। একে একে সব বুলেট শেষ করে ফেললাম। কিন্তু একটা চোখও নিভে যায়নি। মনে হচ্ছে যেনো চোখের আলোটা আরো বেড়ে যাচ্ছে তাদের। সম্ভবত তারা আমাদের উপর অতিরিক্ত রেগে গেছে।
.
--আমার মনে হয় গুলিতে কোনো কাজ হবে না। এগুলো কি আমি জানিনা তবে নিশ্চয়ই কোনো সাভাবিক জন্তু নয়। আমি জীবনেও এমন কিছু দেখিনি।
..ফিসফিস করে কথাগুলো বললো আসাদ।
রিমি আর রাহাতের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। থরথর করে কাপছে তারা।
--আমার মনে হয় আমাদের পিছনের দিকে দৌড় লাগানো উচিৎ। নাহলে এদের হাতে মারা পড়বো।
...কথাটা বলেই আমি সবাইকে টেনে নিয়ে পিছনে ঘুরলাম। পিছনে ঘুরেই আরো অবাক হয়ে গেলাম। পিছনেও একইভাবে অনেক গুলো নীল চোখ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তারপর চারদিক থেকেই দেখলাম শুধু চোখ আর চোখ। হঠাৎ রাহাতের আর্ত চিৎকার শুনা গেলো..
--ভা.. ই .. য়া....
আরে রাহাত কই। চিৎকার করে উঠলাম আমি। আসাদের ও কোনো জবাব পেলাম না। চোখগুলো অনেক কাছে এসে গেছে। রিমি এখনো আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। আমার মাথায় কিছুই আসছে না। হঠাৎ রিমিকে তারা টানতে লাগলো।
.
রিমির আর্তচিৎকার শুরু হয়ে গেলো
--খালিদ বাচাও আমাকে নিয়ে গেলো। বাচাও আমাকে।
আমি শক্ত করে ধরে রইলাম এক হাত দিয়ে রিমির হাত। সেই চোখের আড়ালে থাকা দানবগুলো টানতে লাগলো রিমিকে। আমি সবগুলো পকেটে হাত ঢুকিয়ে খুজতে লাগলাম আমার সিগারেট জালানোর লাইটার টা। ডান পকেটে হাত দিতেই পেয়ে গেলাম সেটা। রিমি হঠাৎ আমার হাত ছেড়ে দিলো। আর কোনো চিৎকারের আওয়াজ পেলাম না। ততক্ষণে লাইটার টা জালিয়ে ফেললাম।
.
আগুনে কাজ হয়েছে মনে হচ্ছে। নিভু নিভু লাইটারের হালকা আলোয় দানবগুলোর চেহারা এবার আবছা দেখতে পেলাম। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে তারা। সম্ভবত আগুন দেখে আর কাছে আসছে না তারা। দেখতে মানুষের মতোই। কিন্তু সর্বশরীরে লোমে আবৃত। আর পায়ের দিকটা বাঘের পায়ের মতো। দাঁতগুলো ভয়ংকর ধারালো। একদম পশুর মতো। । বাঘের দাত ঠিক এমনি। হাতের নখগুলো ও হিংস্র পশুর মতো । চোখ দিয়ে বেরোচ্ছে জলন্ত নীল আভা। প্রত্যেকের পড়নে হাফ প্যান্ট জাতীয় কিছু। সম্ভবত এরা মানুষ আর পশুর মাঝামাঝি কোনো প্রাণী দেখে যা মনে হয়।
.
আমি বুদ্ধি খাটালাম। জানোয়ার গুলো আগুন ভয় পায়। এখন আগুনই আমার একমাত্র হাতিয়ার। পায়ের কাছ থেকে পড়ে থাকা কিছু শুকনো গাছের ডালে আগুন জালিয়ে দিলাম। এরপর সেখানে আরো কিছু শুকনো ডাল যোগ করতে লাগলাম।লক্ষ করলাম জানোয়ার গুলো নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলাবলি করছে আর পিছনে পিছিয়ে যাচ্ছে।
.
যাই হোক আগুনে অন্তত কাজ হয়েছে। আমার লাইটারের সব গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। আর আগুন জালাতে পারবো না। তাই এই আগুন নিভতে দেয়া যাবে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম দানবগুলোর আর একটাও নেই। সবগুলো আগুনের ভয়ে পালিয়ে গেছে। এই সুযোগে আমি আরো অনেক গুলো শুকনো ডাল সংগ্রহ করে নিলাম। সারারাত আগুন জালিয়েই রাখতে হবে।
.
অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। তাই জিরিয়ে নিতে একটু বসে পড়লাম। মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে। সবাই চোখের সামনে হারিয়ে গেলো। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার জন্যই তারা ওই জানোয়ার গুলোর শিকারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন আমি কি করবো। এখানে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো তাদের কোনো হদিস মিলবে না। দেরী করলে হয়তো তাদের আর জীবিত পাবো না। আর এই জানোয়ার গুলো যে হিংস্র এরা আদৌ কি ওদের জীবিত রেখেছে। মাথা টা চিন্তায় ভরে গেলো। সবার আর্তনাদের কথা মনে করছি আর নিজেকে গালাগাল করে চলেছি। সব আমার জন্যই হয়েছে। কিন্তু এখন আমার কি করা দরকার? বসে বসে সেটাই ভাবতে লাগলাম।
.
সাথে থাকা ওয়ালথারটা আবার ফুল লোড করে নিলাম। কাজ হবে কিনা জানিনা। তবে আমার সঙ্গীদের খুজেঁ বের করতেই হবে। তারা হয়তো আমার সাহায্যের অপেক্ষায় আছে। হাত ঘড়িতে সময় দেখলাম। রাত বারোটা বেজে গেছে। উফ রাতের তো কেবল শুরু হলো। মাটিতে একটা চাপড় দিলাম রাগে দুঃখে।আর নিজেকে বলতে লাগলাম, কেনো মরতে এলাম এই জঙ্গলে। আর এতোগুলো দানবের সাথে আমি একা কি করে লড়বো!
.
বজ্রপাতের আওয়াজ শুনলাম হঠাৎ। চমকে উঠলাম। বিপদ যখন আসে চারদিক থেকেই আসে।এই দুর অবস্থায় প্রকৃতিও আমার সঙ্গো দিলো না। সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হলো। এখন কি হবে আমার। আগুন নিভে যাচ্ছে। একটু বাদেই আগুনটা নিভে গেলো।
.
আমার শেষ আশাটাও নিভে গেলো। এখন আর লড়বার মতো কোনো অস্ত্রই নেই আমার কাছে। আবার লক্ষ করলাম। ঝোপের আড়াল থেকে আবার সেই চোখগুলো উকি দিচ্ছে। নীল আভাযুক্ত চোখগুলো আবার এগিয়ে আসতে লাগলো আমার দিকে। চারদিক থেকেই ঘিরে ফেলেছে আমাকে। কি করবো আমি এখন!
.
_____চলবে _____
Reactions

Post a Comment

0 Comments