------মিরাকল মিশন ------ ১ম পর্ব


---লেখকঃ Khalid Hasan ---

--------প্রথম পর্ব ------



ভেজা চোখ নিয়ে দাদুর কবরের পাশে বসে আছি।অনেকটা কষ্ট হচ্ছে উনার মৃত্যুতে। মন থেকে এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা যে উনি আর পৃথিবীতে নেই। এইতো এক সপ্তাহ আগেও তো আমার সাথে কত কথা বললেন। আর আজ মাটির নিচে চিরঘুমে নিমজ্জিত। দাদুর চলে যাওয়া আমি মোটেও মেনে নিতে পারছি না।আমার পরিবারের আর কেউ আমায় না বুঝলেও দাদু ঠিকই আমায় বুঝতো। তাইতো দাদুর মৃত্যুর পর প্রতিদিনই তার কবরের পাশে এসে বসে থাকি। আজও এসেছি।দাদুর কবরটা আমাদের বাসা থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা শান্ত জায়গায়। বলতে গেলে এটা একটা পারিবারিক গোরস্তান। আমাদের পূর্বপুরুষ দের সবাইকে এখানেই কবর দেয়া হয়। হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও এখানেই শায়িত করা হবে।তবে আজ অনেক দেরী হলো। প্রায় রাত দশটার কাছাকাছি চলে গেছে সময়।
.
আমি মাথা নিচু করে হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম। অন্ধকারেও ঘড়িটা অনেক উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে। সেই আলোতে সময়টা স্পস্ট দেখা যাচ্ছে।ঘড়িটা দাদু আমাকে মৃত্যুর রাতে দিয়েছিলো।আমি বুঝতে পারছি না এখনো বিষয়টা। দাদু আমাকে এই ঘড়িটা কেনইবা দিলো। সারা জীবনে দাদু আমাকে যা দিয়েছে তা আমার চাওয়ার চেয়েও অধিক। কিন্তু মৃত্যুর সময় এই একটা পুরনো ঘড়ি দেয়ার কারণটাই বা কি! দাদুর মারা যাওয়ার রাতে দাদু আমায় তার রুমে ডাকলেন।তিনি মাসখানেক থেকেই অনেক অসুস্থ। বাড়ির সবাই উনার রুমে ছিলেন। তিনি সবাইকে বেড়িয়ে যেতে বললেন। আর সবাইকে বল্লেন আমার সাথে তিনি একান্ত কিছু কথা বলবেন। এরপর সবাই চলে গেলে তিনি আমাকে বসতে বললেন। আমি বসলাম তার বিছানার পাশে একটা চেয়ার টেনে। তারপর তিনি বলতে লাগলেন "খালিদ তোকে আমার অনেক কিছু বলার ছিলো। কিন্তু আজ আমি একদম শেষ প্রান্তে এসে গেছি। সময় খুবই কম।এতকিছু এই সংকীর্ণ মুহুর্তে তোকে বলতে পারছি না।" আমি দাদুকে থামিয়ে দিয়ে বললাম "দাদু তুমি এভাবে বলছো কেনো? সামান্য শরীর খারাপ হলে কেউ এইসব বলে? তোমার কিচ্ছু হবে না।" দাদু আমার কথায় কোনো কর্ণপাত করলেন না। বল্লেন, আমি জানি খালিদ আমার বিদায় নেয়ার সময় এসে গেছে। তুই সবসময় জানতে চেয়েছিলি আমি মাঝে মাঝেই গায়েব হয়ে কোথায় চলে যাই। আমি তোকে কিছুই বলিনি। তবে তুই একদিন আমার সম্পর্কে সব জানতে পারবি। তবে আমার সময় হয়েছে আমার কাজটা তোকে বুঝিয়ে দেয়ার। সবাই চিরজীবন দুনিয়ার হাল ধরে থাকে না। প্রবীনরা বিদায় নিবে আর নবীনরা সেই জায়গায় স্থান করে নিবে এটাই নিয়ম। আমাদের তাই উচিৎ তোমাদেরকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে তারপর দুনিয়া ত্যাগ করা।
.
দাদু তার কথা শেষ করেই এই ঘড়িটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়েছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই ঘড়ি দিয়ে কি হবে? এটা আমাকে দিচ্ছ কেনো?
দাদু বললেন, আমার কথা বলতেও খুব অসুবিধা হচ্ছে। তুই ঘড়িটা রাখ। সময় হলে তুই এই ঘড়ির সূত্রের মাধ্যমে আমার সম্পর্কে সব জানতে পারবি। আমি ভেবেছিলাম তুই তোর বাবার মতোই হবি একজন অর্থলোভী। তবে যখন দেখলাম যে না তুই আমার মতোই হয়েছিস তখনই বুঝে গেলাম আমার দায়িত্ব টা তোকেই দেয়া উচিত। তোর এডভেঞ্চার আর অলৌকিক বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি আর রহস্যের সমাধান উম্মোচন এই বিষয় গুলো দেখেই বুঝেছিলাম তুই এই কাজের যোগ্য। আমার আর সময় নেই। আমি তোকে আমার দায়িত্ব টা দিয়ে গেলাম। আমি আশা করবো তুই সেটা ভালোভাবেই পালন করবি।
.
আমি দাদুকে জিজ্ঞেস করলাম, আসলে দাদু আমি বুঝতে পারছি না তোমার কথা। তুমি কোন দায়িত্বের কথা বলছো?
দাদু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, খুবই গোপণ বিষয় এটা।তবে সময় হলে তুই সবকিছুই বুঝে যাবি। এখন আমার যাওয়ার সময় হয়েছে।
.
কথাগুলো বলার কিছুক্ষণ পরেই দাদু মারা গিয়েছিলেন।
কিন্তু আমি এখনো জানতে পারলাম না আসলে দাদু কিসের কথা বলেছিলেন। ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। দাদুর চলে যাওয়ার পর আজই প্রথম এটা হাতে পড়েছি। আমি বুঝতে পারছি না এই ঘড়িতে এমন কি রয়েছে? কি এমন বিশেষ সূত্র যা আমার দায়িত্বের কাছে নিয়ে যাবে?
ঘড়িটা হাত থেকে খুললাম। এইবার বসে বসে ঘড়িটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। ঘড়িটার মধ্যে কিছু লুকানো আছে কিনা খুজতে লাগলাম। তবে ঘড়িটা সাধারণ ঘড়িগুলোর থেকে একটু আলাদাই মনে হচ্ছে। ইদানিং মার্কেটে স্মার্ট ঘড়ি পাওয়া যায়।অনেকটা সেরকম। তবে সাইডে একটা বড় বাটন রয়েছে। পাওয়ার বাটন নাকি! দিলাম একটা চাপ আগে পিছে না ভেবেই। হঠাৎ চারিদিকে বাতাসের আহবান শুরু হলো। আমি ঘড়ি পকেটে রেখে চারিদিকে তাকালাম। একটু আগেও তো চাদেঁর আলো ছিলো আর এখনই ঝড় শুরু হয়ে যাবে নাকি!
আমার পকেটে ঘড়িটা বিপ বিপ শব্দ করতে লাগলো। আমি আবার ঘড়িটা বের করলাম। চিন্তা করতে লাগলাম আসলে ঘড়িটার কারণেই এমন হচ্ছে না তো। নাকি দাদু আমাকে আলাদিনের আশ্চর্য কিছু দিয়ে গেছেন!
.
ঘড়িটার স্ক্রিনে দেখতে পেলাম সেখানে সময় দেখা যাচ্ছে না আর। তার জায়গায় অন্যকিছু ভেসে আছে। অনেকটা স্মার্ট ওয়াচ স্ক্রিনের মতোই। কিন্তু স্ক্রিনে যা কিছু দেখা যাচ্ছে তার কিছুই আমি বুঝতে পারছি না।আমি আবার আকাশের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে ঝড় শুরু হবে। আমি বাড়ির পথে হাটতে শুরু করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পিছনে কিছু একটার জোরালো শব্দ শুনতে পেলাম।
.
ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকালাম। একটা গাড়ি আকাশপথে ভেসে আসছে। অবাক কান্ড। এটা আসলে গাড়ি নাকি কোনো আকাশযান! আকাশযানটা আমার সামনেই একটা জায়গায় ছিটকে পড়ে গেলো। আমি এর আগে এমন কোনো বাহন দেখিনি। আমি ভাবলাম মনে হয় আমার সামনে কোনো এলিয়েন পৃথিবীর বুকে অবতরণ করলো। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছি। পায়ে হেটে বাহনটির কাছে গেলাম। যেতেই দেখলাম একটা বিশাল বড় দেহ বিশিষ্ট একটা লোক বাহনটির দরজা খুলে বের হয়ে আসছে। আমার থেকে সামান্য দূরেই। তবে অন্ধকার স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না সেটা মানুষ নাকি এলিয়েন। বিশাল বড় দেহ দেখে আমি একটু ভয়ের মধ্যেই আছি। আকাশ কখন শান্ত হয়ে গেছে টেরই পাইনি। ঝড়ের আর কোনো লক্ষণ দেখছি না। এদিকে আমার ঘড়িটা বিপ বিপ করেই চলেছে। বিশাল দেহটা ধীরে ধীরে আমার দিকে হেটে আসতে লাগলো। আমি একটু ভীত হয়ে গেলাম। আমি এলিয়েন বিষয়ে যেসব হলিউড মুভি দেখেছি সবগুলো মনে করতে লাগলাম। আসলে এলিয়েনের সাথে দেখা হলে কি করা দরকার সেটাই এখন আমার জানা দরকার। কিন্তু বিপদে কিছুই মাথায় আসছে না।ভূত প্রেত হলে আলাদা ব্যপার ছিলো। কিন্তু একটা এলিয়েনের ব্যপারে আমার কোনো ধারণাই নেই। কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিলো দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু তৎক্ষণাৎ বিশাল দেহটা আমার সামনে এসে দাড়িয়ে গেছে। আমি ভয়ে অস্থির হয়ে যেতে লাগলাম। তবুও ঠায় দাড়িয়ে থাকলাম। এক চুলও নড়লাম না সেখান থেকে।
.
---- চলবে -----
Reactions

Post a Comment

0 Comments