---মিরাকল মিশন :ফরেস্ট মিসট্রি ---


--লেখকঃ Khalid Hasan---

-------নবম পর্ব --------


.
অন্দরমহলের দিকে যেতে যেতে আবার স্থাপত্য নিদর্শন গুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। দেয়ালগুলোতে কি সুন্দর কারুকাজ করা। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে হরেকরকম ফুলের সৌরভ। সুগন্ধে মাতাল হয়ে আছে চারিদিকে। অন্দরমহলের সামনে গিয়ে রবিন দাড়িয়ে গেলো..
--মহারাজা আমি আর ভিতরে যেতে পারবো না। রানীমার নিষেধ আছে। কিছুদুর গেলেই রানীমার দেখা মিলবে।
--আচ্ছা আচ্ছা তোমার যেতে হবে না। আমি যাচ্ছি।
আমি একা একাই গেলাম। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম কি সুন্দর করে সাজানো একটা মহল। ফটকে ফুল দিয়ে সজ্জিত। ফুল দিয়ে বেষ্টন করা তার দেয়াল। একদম তাজা ফুল। নাকে শুধু সুবাস ছড়াচ্ছে অবিরত। দরজার ধারে গিয়ে দাড়াতেই এক দাসী আমাকে দেখে ফেললো।
--একি! আমাদের ভাবি রাজামশাই যে। রানীমার সাথে দেখা করার জন্য আর বুঝি তর সইছে না?
আমি কিছু বললাম না। এইখানকার দাসীরাও দেখছি অনেক সুন্দর। সবাই অনেক রূপবতী। আমার মাথাটা একটু গরম হয়ে আছে। তাই কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে না। দাসী ইশারায় তার পিছনে পিছনে ডাকলো। আমি যেতে লাগলাম। রানীর কক্ষে নিয়ে গেলো সে আমাকে। গিয়ে দেখলাম সেখানে অনেক দাসী তার সেবায় ব্যস্ত। কেউ বাতাস করে দিচ্ছে কেউবা মাথা টিপে দিচ্ছে কেউ বা হাত পা টিপতে ব্যস্ত। আহা কত্ত সুখ। রানী মায়া আমাকে দেখেই হাত দিয়ে তালি বাজালেন। আর সাথে সাথে সব দাসী ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো। ফুলের বিছানায় বসে আছেন তিনি।
--কি যুবক, তোমার বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করলে?
--হ্যাঁ, কিন্তু তাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে কেনো? আর আমাকে এখানকার রাজা বানানোর কারণটাই বা কি? আমার সিদ্ধান্ত না জেনে আপনি আমাকে রাজা বানানোর কে?
--এতো উতলা হয়ো না যুবক, এখানে যা কিছু হয় আমার সিদ্ধান্তে হয়। কারো কিছু বলার সাহস নেই। আর কারো কিছু করারও নেই। আর আমার রাজা হতে তোমার সমস্যা কি? আমি কিসে কম আছি?
--না আসলে আমি সেটা বলতে চাইছি না। আপনি অনেক রূপসী। তাই বলে জোর করে তো আপনি আমাকে আপনার রাজা বানাতে পারেন না। আমারো তো মতামত থাকতে পারে?
--কেনো রাজা হতে তোমার কি সমস্যা?
--আমি আগে থেকেই একজনকে ভালোবাসি। যে আমার মনের রানী আর আমি তার রাজা।
--কে সে?
--আপনি যাদের বন্দী করে রেখেছেন তাদের মধ্যে একজন মেয়ে রয়েছে। সেই মেয়েটাই।
রানী এইবার একটু রেগে গেলো লক্ষ করলাম। সভাবতই কোনো নারীর সামনে অন্য নারীকে নিয়ে আসলে তারা হিংসায় জলতে শুরু করে রানীও তাই করছে।
--মেয়েটাকে ভুলে যেতে শুরু করো যুবক। কারণ মহারানী মায়া একবার যা সিদ্ধান্ত নেয় তা করেই ছাড়ে। আর তুমি অনেক ভাগ্যবান আমার রাজা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে তোমার। আমাকে দেখো .. চেয়ে দেখো আমার রূপ। এই রূপের আগুনে নিজেকে জালাতে কোন যুবক চাইবে না। আর আমার এই রূপ আজীবন থেকে যাবে।
আমি মায়ার দিকে চেয়ে রইলাম। এই মেয়ে দেখি নাছোড়বান্দা। রাজকীয় পোশাকে সত্যিকারের একটা রানীর মতোই লাগছে। রূপ তার পাগল করা। এমন মেয়েকে যেকোনো পুরুষ কাছে পেতে চায়। আর আমিতো আসলেই সৌভাগ্যবান। রানীর সাথে রাজত্ব পাচ্ছি। কিন্তু! আমার বন্ধুদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতে হবে। আর এখান থেকে চলে যেতে হবে। আমার বাড়িঘর আছে পরিবার আছে। এখানকার এই আজব জায়গায় আমি থাকতে পারবো না। না না কখনোই না।
.
--দেখুন মহারানী মায়া আমি জানিনা আমাদেরকে কে বা কারা এখানে নিয়ে এসেছে আর কিভাবে এনেছে তাও জানিনা। তবে এখান থেকে আমাদের যেতে হবে। আমরা এই পরিবেশের লোক নই। আমাদের যেতে দিন আপনি।
রানীর আমার কথায় অট্টহাসি দিলেন।
--হা হা হা .. যুবক এখানে এসে গেলে আর যাওয়ার উপায় নেই। তাই আমি যা বলছি তাই করো। অমাবশ্যার আগে পর্যন্ত এখানে থাকতে তোমার একটু অন্যরকম লাগবে তবে তারপর থেকে তুমিও এই জগতের অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
--কেনো অমাবস্যায় কি হবে?
--আগামী অমাবশ্যার রাতে তোমার আর আমার বিবাহ হবে। আর সেই রাতে তোমার আর আমার মধুর মিলন হবে। সেদিন সৃষ্টি হবে অন্যরকম এক মহাশক্তি।সেই পর্যন্ত তোমার বন্ধুরা বন্দী থাকবে।
আমি মায়ার কথার আগামাথা কিছু বুঝলাম না। কি বলছে এসব! মাথা কি গেছে নাকি মেয়েটার! কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি সেই জঙ্গলের ঘোর রহস্যটা আসলে এই রাজ্যটাই। আমাকে এটার শেষ দেখতে হবে।
--দেখুন,মহারানী মায়া আপনি কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন ..
--এই যুবক, আমাকে মহারানী বলতে হবেনা। শুধু মায়া বলে ডাকবে। আর তুমি করে বলবে। রাজ্যের সবাই এখন তোমাকে রাজা মানে। তুমিতো এখনো এই রাজ্যটাকে ভালো করে দেখনি। আজকে যাও রাজ্যটা ঘুরে দেখো। অনেক ভালো লাগবে। আমি রবিনকে বলে দিবো ও তোমাকে ঘুরে নিয়ে বেড়াবে। এখন তুমি অন্দরমহল থেকে বেড়িয়ে যাও। আমার স্নানের সময় হয়েছে।
.
আমি অন্দরমহল থেকে একরাশ রাগ নিয়ে বের হলাম। ওইদিকে আমার বন্ধুরা বন্দী আছে আর আমি কিনা রাজ্য ঘুরে দেখবো। আমার রানীও চাইনা রাজ্যও চাইনা। আমি এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাই।
.
আর একবার বন্ধুদের সাথে দেখা করে আসলাম। ওদের কাছে গেলে আসতে ইচ্ছে করেনা তবে কয়েদখানায় পরে থাকলে চলবে না। আমাকে তো এখান থেকে বেরুনোর পথ বের করতে হবে।
.
আমি এখনো এই রাজবাড়ি থেকে বের হইনি। বাইরের পরিবেশ টা দেখা হয়নি এখনো।আসলে বাইরে না গেলে পালানোর পথটাই বা খুঁজবো কি করে। তাই বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রবিন আমাকে নিয়ে বের হলো। রাজ্য ঘুরে দেখার ছলে পালানোর পথটা দেখে নেয়া যাবে।
.
রাজবাড়ী থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে মনে হলো আমি এক অন্য জগতে আছি। মনে হচ্ছে রূপকথার রাজ্য এটা। পথ ঘাট গুলো যেনো অন্যরকম। খুবই ছোট্ট একটা রাজ্য। রাজ্যের বাইরে কিছুই দেখলাম না। রাজ্যের চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। এগুলো কি আসলেই সত্যি নাকি কোনো মায়া জাদুর খেলা! সে আমার বুঝে কাজ নেই আমার শুধু জানতে হবে এখান থেকে বেরুনোর পথটা। আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই কিছু না কিছু মানুষ ঘোর চাহনিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আমার খুব অসস্তিকর লাগলো ব্যপারটা। আর মানুষ গুলো অনেক অদ্ভুত। মনে হচ্ছে এরা পৃথিবীর মানুষের মতো নয়।
--আচ্ছা রবিন এখানে নিরিবিলি কোনো যায়গা নেই যেখানে একা একটু শান্তিতে বসা যায়!
আমার কথায় রবিন আমাকে জলাধারের কাছে নিয়ে গেলো। পরিবেশ গুলো খুব সুন্দর লাগছে। আমি এরকম পরিবেশ আগে কখনো দেখিনি। যতই দেখছি মুগ্ধ হচ্ছি। এখান থেকে আর,যেতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছে করছে আজীবন এখানেই কাটিয়ে দেই।
রবিন কোনো কথা বলছে না। সম্ভবত লোকটা খুব কম কথা বলে। আমি রবিনের সাথে ভাব জমাতে লাগলাম।
--কি রবিন সাহেব কথা বলছেন না কেনো?
--আমি আপনার গোলাম মহারাজা। আমি আপনার সাথে কি কথা বলবো?
--আরে ধুর তেরি মহারাজা। কল মি খালিদ।
--না মহারানী রাগ করতে পারেন।
--আরে আমাকে খালিদ বলে ডাকতে পারো নো প্রবলেম। আমি রানীকে বুঝিয়ে বলবো। এখানকার মানুষ গুলো এখনো কিভাবে এতো ব্যাকডেটেড রয়ে গেছে তাই বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা তুমি তো মায়ার খাশ গোলাম। কত বছর ধরে গোলামী করছো তার?
--মৃত্যুর পর থেকেই গোলামী করে আসছি।
--কিইইহ!!!!!
রবিনের কথায় আমি হতচকিত হয়ে তাকালাম তার দিকে। তার ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো নীরবে। ভয়ে আমি ঢোক গিলতে লাগলাম। কি বলছে এসব লোকটা!
.
--মৃত্যুর পর থেকে মানে! তুমি কি বলতে চাইছো তোমার মৃত্যু হয়ে গেছে?
--হ্যাঁ, আর এই রাজ্যে যারা আছে তারা সবাই মৃত। বলতে গেলে সবাই একেকটা জীবিত লাশ।
--কি বলছো এইসব! মাথা ঠিক আছে?
--শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। আসলে দুনিয়ার মানুষ এই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুই জানে না আর যারা জানতে পারে তারাও আর ফিরে যেতে পারে না। আসছে অমাবশ্যার পর আপনিও একজন জীবিত লাশে পরিনত হবেন। তখন সব বুঝতে পারবেন।
--কি বলো এইসব আজগুবি কথাবার্তা!
--আজগুবি নয় সত্যি। আপনি জীবিত থাকবেন কিন্তু আপনার হৃদস্পন্দন থাকবে না। তখন আপনিও আমাদের একজন হয়ে যাবেন।
--আর বলোনাতো চলো এখান থেকে।
..
এইসব আজগুবি কথাবার্তা শুনে এই প্রথমবারের মতো আমার ভয় লাগতে শুরু করেছে। কি সব বলছে।। এই রাজ্যের সবাই নাকি মৃত। তখন আমার মনে পড়তে লাগলো মানুষ গুলোর ঘোর লাগা চাহনি আর ঘোলাটে চোখ। মনে হচ্ছে এইসবের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিরাট কোনো রহস্য। এটা আমাকে খুজে পেতেই হবে। কিন্তু কিভাবে বের করবো তা আমি। সেটাই ভাবতে লাগলাম আমি।
.
--আসলে রবিন আমি আছি কোথায়? পৃথিবী তেই আছি তো?
--হ্যাঁ পৃথিবী তেই তবে মায়া জাদুতে ঘেরা একটা জায়গায়। ভূমি থেকে তিনশো ফুট গভীরে। যেটা মানুষের ভাবনার বাইরে।
--কিইইহ... তার মানে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড এ আছি!!
--হ্যাঁ। আপনাকে যা বললাম তা রানীকে বলবেন না তাহলে আমাকে শাস্তি দিবে। ভয়ানক শাস্তি।
--ঠিক আছে বলবোনা কিছু।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। আরো কতোকিছু যে শুনতে হবে আর দেখতে হবে জানিনা। এ যেনো পৃথিবীর নিচে অজানা আরেক মায়ার জগত্। আমি কিভাবে বের হবো এই জগত্ থেকে!!!!
.
.
-----চলবে-----
Reactions

Post a Comment

0 Comments