আখেরী চার শম্বাহ্ কী ও কেন?

Hi all wellcom to Anytopicsbd
আখেরী চার শম্বাহ্ কী ও কেন?
আখেরী চাহার শম্বাহ

আখেরী চাহার শম্বাহ


❤ প্রশ্ন:
আখেরী চার শম্বাহ্ কী ও কেন? এ বিষয়ে এক এক স্থানে এক এক রকম বলতে শুনা যায়। কেউ পক্ষে আর কেউ বিপক্ষে। সুতরাং বিস্তারিত আলোচনার নিবেদন রইল।
প্রশ্নোত্তর-দিচ্ছেন-
মুফতি আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আল কাদেরী,
অধ্যক্ষ- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌✌
❤ উত্তর:
সফর মাস আরবী হিজরি মাসের ২য় মাস। আর মাহে সফরের শেষ বুধবারকে ইসলামী পরিভাষায় মুসলিম সমাজে আখেরী চার শম্বাহ্ হিসেবে বুঝায়। যেহেতু এক সময়ে ফার্সী ভাষা প্রচলিত ছিল আর ফার্সী ভাষায় বুধবারকে চার শম্বাহ্ বলা হয়।
মুসলিম সমাজে সফর মাসের শেষ বুধবারকে গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। এর পেছনে যে প্রেক্ষাপট রয়েছে তা হলো ‘দুনিয়াবী সকল বাতিল অপশক্তি প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়ে ইহুদীগণ হুযূর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে যাদু করেছিল। কিন্তু তাদের যাদু শক্তি প্রিয়নবীর মধ্যে কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
অবশেষে ৭ম হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মহররম মাসে মদিনায় ইহুদী নেতৃবৃন্দ লবীদ ইবনে আসম ইয়াহুদীকে বলল, তুমি ও তোমার কন্যাগণ তো যাদু বিদ্যায় পারদর্শী।
সুতরাং মুসলমানের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ধ্বংস ও ক্ষতি সাধনের জন্য যাদু করো। লবীদ কৌশলে প্রিয় রাসূলের এক ইহুদী গোলামের মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার ব্যবহৃত চিরুনীর ভাঙ্গা দাঁত ও চুল মোবারক সংগ্রহ করে নিলো। তারপর মোমের একটা পুতুল তৈরি করে তাতে এগারোটি সুঁচ ঢুকিয়ে দিল। একটি সুতায় ১১টি গিরা দিলো।
এসব কিছু ওই পুতুলের ভেতর স্থাপন করে প্রবহমান কূপের পানির ভিতর একটা পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রেখে দিলো। এর প্রভাবের ফলে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ চল্লিশ রাত বা ছয় মাস অথবা এক বছরকাল শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন।
অতঃপর জিব্রাইল আমীন আলায়হিস্ সালাম সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস এ দুটি সূরা প্রিয় নবীর উপর নাজিল/অবতীর্ণ করলেন। আর এ দু’টি সূরা মিলে আয়াত সংখ্যা হয় ১১টি।
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ওহীর মাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ দেয়া হল। আল্লাহর হাবীব হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে উক্ত কূপে পাঠিয়ে ছিলেন, তিনি কূপের পানি ফেলে দিয়ে যাদুর সব সমগ্রী পাথরের নীচ থেকে বের করে নিয়ে আসলেন। হুজুর আলায়হিস্ সালাম এ সূরা ২টি পাঠ করলেন প্রতিটি আয়াত পাঠের সদকায় একেকটি করে গিরা খুলে গেল।
ফলে আল্লাহর প্রিয় হাবীব হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরোগ্য লাভ করলেন এবং গোসল করলেন। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন সে দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার।
তাই বালা-মুসিবত, রোগ-শোক থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাইতে মুসলিম সমাজ এ দিবসটি গোসল ও দোয়া দরূদের মাধ্যমে ভাল ও উত্তমপন্থা হিসেবে পালন করে থাকে। ওয়াজিব ও জরুরি হিসেবে নয়।
ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা আলকাদেরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘জাওয়াহেরুল কুনুজ’ কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৬১৬ পৃষ্ঠার বরাতে স্বীয় রচিত ‘ফতোয়ায়ে আজিজীতে উল্লেখ করেন সফর মাসের শেষ বুধবার সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল করা উত্তম। আর সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা ভাল ও সওয়াবের কাজ। উক্ত কিতাবের ৬১৭ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ রয়েছে- মাহে সফরের শেষ বুধবার সাতটি আয়াতে সালাম লিখে তা পানিতে ধুয়ে পানিটুকু পান করা উত্তম ও শেফা।
‘তাজকিরাতুল আওরাদ’ কিতাবে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি আখেরি চার শম্বাহ্ তথা মাহে সফরের শেষ বুধবারে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতে রহমত (সাত সালাম বিশিষ্ট আয়াতে করিমা) পাঠ করে নিজের শরীরে ফুঁক দেবে বা তা পানের উপর লিখে ধুয়ে পানি পান করবে আল্লাহ্ পাক তাকে সব রকম বালা-মুসিবত ও রোগ-ব্যাধি হতে নিরাপদে রাখবেন।
‘‘আনওয়ারুল আউলিয়া’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি আখেরী চার শম্বাহ্র দিন দু’রাকাত নফল নামায আদায় করবে আল্লাহ্ তাকে হৃদয়ের প্রশান্তি দান করবেন।
‘ফতোয়ায়ে আজিজী শরীফে’ ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।
সুতরাং মাহে সফরের শেষ বুধবার নফল নামাজ, দোয়া-দরুদ পড়া, কলা পাতায়/কাগজে আয়াতে শেফাসমূহ লিখে গোসল করা এবং আয়াতে সালামসমূহ লিখে পানিতে দিয়ে তা পান করা ভাল ও উত্তম আমল। এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে বাধা নেই।
তদুপরি ‘আর রাহিকুল মাখতুম্’ আরবী সীরাত গ্রন্থে সফিউর রহমান মোবারকপুরী বর্ণনা করেন-
ﻭﻳﻮﻡ ﺍﻻﺭﺑﻌﺎﺀ ﻗﺒﻞ ﺧﻤﺴﺔ ﺍﻳﺎﻡ ﻣﻦ ﺍﻟﻮﻓﺎﺓ ﺍﺛﻘﻠﺖ ﺣﺮﺍﺭﺓ ﺍﻟﻌﻠﺔ ﻓﻰ ﺑﺪﻧﻪ ﻓﺎﺷﺘﺪ ﺑﻪ ﺍﻟﻮﺟﻊ ﻭﻏﻤﻰ ﻓﻘﺎﻝ ﻫﺮﻳﻘﻮﺍ ﻋﻠّﻰ ﺳﺒﻊ ﻗﺮﺏ ﻣﻦ ﺍﺑﺎﺭﺗﺸﻰ ﺣﺘﻰ ﺍﺧﺮﺝ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﺎﻋﻬﺪ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﻓﺎﻓﻌﺪﻭﻩ ﻓﻰ ﻣﺨﻀﺐ ﻭﺻﺒﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻤﺎﺀ ﺣﺘﻰ ﻃﻔﻖ ﻳﻘﻮﻟﻪ ﺣﺴﺒﻜﻢ ﺣﺴﺒﻜﻢ ﻭﻋﻨﺪ ﺫﺍﻟﻚ ﺍﺣﺲ ﺑﺨﻔﺔٍ ﻓﺪﺧﻞ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻫﻮ ﻣﻌﺼﻮﺏ ﺍﻟﺮﺃﺱ ﺣﺘﻰ ﺟﻠﺲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ ﻭﺧﻄﺐ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﺠﺘﻤﻌﻮﻥ ﺣﻮﻟﻪ ﺍﻟﺨــ ﺍﻟﺮﺣﻴﻖ ﺍﻟﻤﺨﺘﻮﻡ ﻟﺼﻔﻰ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﻔﻮﺭﻯ ـ ﺍﻟﺼﻒ ……….৪৬৫
অর্থাৎ হুজুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল শরীফের পাঁচদিন পূর্বে (প্রিয় নবীর দুনিয়াবী হায়াতের শেষ বুধবারে (চার শম্বাহ্ দিবসে) প্রিয় নবীর নূরানী শরীর মোবারকের উত্তাপ অত্যন্ত বেড়ে গেল। এতে তাঁর কষ্ট বেশী হয়ে গেল। বেঁহুশের মত হয়ে গেলেন। এ সময় তিনি বললেন, তোমরা বিভিন্ন কূপের সাত মশক পানি আমার উপর ঢাল, যাতে আমি সাহাবায়ে কেরামের নিকট যেতে পারি এবং প্রতিশ্র“তি নিতে পারি।
অতঃপর উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে (প্রিয় রাসূলকে) বসালেন এবং তাঁরা তাঁর শরীর মোবারকে পানি প্রবাহিত করলেন। তিনি বলতে লাগলেন, যথেষ্ট, যথেষ্ট। তিনি সুস্থতা বোধ করলেন এবং মসজিদে নববী শরীফে মাথা মোবারকে পট্টি বাঁধাবস্থায় তাশরীফ নিলেন, তারপর মিম্বর শরীফে বসে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামের সম্মুখে বক্তব্য পেশ করলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম তাঁর চতুর্পার্শে সমবেত ছিলেন। [আর রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ৪৬৫]
উপরিউক্ত বর্ণনা মতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াবী হায়াতের শেষ বুধবার সাত মশক পানি দ্বারা গোসল করেছেন এবং সুস্থতা অনুভব করে মসজিদে নববী শরীফে প্রবেশ করেছেন এবং খুতবা (বয়ান) প্রদান করেছেন।
এ বর্ণনা দ্বারা সফর মাসের আখেরী চার শম্বাহ্ বা বুধবার বুঝা যায় না, তাই ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ আখেরী চার শম্বাহ্ বা মাহে সফরের শেষ বুধবার গুরুত্বসহ পালন করা ভিত্তিহীন বলেছেন, হয়তো ‘জাওয়াহেরুল কুনজ’ এর বর্ণনাসমূহ তাঁদের দৃষ্টিগোচর হয়নি, বিধায় এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি ও ফিতনা ফ্যাসাদ না করে জাওয়াহেরুল কুনজ, ফতোয়ায়ে আজিজী এর বর্ণনাসমূহ দেখার ও অনুধাবন করার আহ্বান রইল।
[ফতোয়ায়ে আজিজী, কৃত. ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী শেরে বাংলা আজিজুল হক আলকাদেরী রহ.]
Monthlytarjuman Anjuman এ প্রকাশিত।
মাহে সফর সংখ্যা-১৪৩৯হিজরী, 2017
কপি মাওলানা আশরাফুল ইসলাম কাদেরী মা:জি:আ।
Reactions

Post a Comment

0 Comments